প্রচণ্ড গরমে এসি-ফ্রিজের বাজার জমজমাট

 

নাজমুল হুসাইন: গত কয়েক দিন তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রিতে ঘুরপাক খাচ্ছে। নাভিশ্বাস ওঠা এ গরমের শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের (এসি) বিক্রি বেড়েছে। একে তো গরম, আবার রোজা- এ দুই কারণে রেফ্রিজারেটরেরও (ফ্রিজ) চাহিদা বেড়েছে। গত সময়ের যে কোনো মাসের তুলনায় এসি ও ফ্রিজের বিক্রি প্রায় দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

এসি সংযোজনকারী ও আমদিনকারকরা জানান, মে মাসে হঠাৎই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসি বিক্রি বেড়েছে। এতে অনেক ক্ষেত্রে চাহিদার তুলনায় জোগানে টান পড়েছে। তাই অনেকেরই এসির স্টকও ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। তবে চাহিদা বাড়লেও এসির দামে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। রমজানের স্বস্তি পেতে অনেকেই এসির ব্যবস্থা করছেন ঘরে। সামনে ঈদ উপলক্ষে এসির চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন তারা।

দেশে জেনারেল, শার্প ও মিৎসুবিশির এসি আমদানিকারক এসক্যোয়ার ইলেকট্রনিকস। জানতে চাইলে এসক্যোয়ারের মহাব্যবস্থাপক (সেলস ও মার্কেটিং) মনজুরুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিক্রি মৌসুমের যে কোনো সময়ের থেকে চলতি মে মাসে বেশি এসি বিক্রি হয়েছে। বিক্রির পরিমাণ প্রায় দেড়গুণ।’

‘এসির কোনো সরবরাহ সংকট রয়েছে কি না’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর থেকে হঠাৎ করেই কোনো এক সময় তীব্র গরম পড়ছে। এমন পরিস্থিতির পূর্ব প্রস্তুতি আমাদের ছিল। এতে আমাদের তিন ব্র্যান্ডের কোনো সংকট বাজারে নেই।’

এসির আরেক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এআর ইলেকট্রনিকস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এসির বিক্রি এবার অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আগে কখনও অল্প সময়ের ব্যবধানে এমন চাহিদা চোখে পড়েনি। প্রচণ্ড গরমে মানুষের স্বস্তির উপায় একটিই। আর মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও দ্রুত বাড়ছে।’

রাজধানীর বিভিন্ন শোরুম ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কিছুটা বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা বাতাস বইলেও বিক্রি কমার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। গতকাল শনিবার রোজার আগের দিন বিক্রি আরও বাড়ে। অনেকে রমজানে প্রশান্তির কারণে এসি কিনছেন। আবার সামনে ঈদের কারণেও অনেকে এসি কিনছেন। আগামী এক-দুই মাসে এসির চাহিদা আরও বাড়বে।

অপরদিকে, গরমে এসির পাশাপাশি ফ্রিজ, এয়ারকুলার ও ফ্যানের বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে কোনো মাসের তুলনায় এখন ফ্রিজের বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ। যদিও এসব পণ্য সারাবছরই কম-বেশি বিক্রি হয়। তবে বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কে মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বছরের মোট চাহিদার ৬০-৬৫ শতাংশ ফ্রিজ ও এসি এ সময় বিক্রি হয়।

গতকাল রামপুরা বেস্ট ইলেকট্রনিকসের শোরুমে ক্রেতা মুহিত মুকিম বলেন, ‘রমজানের কারণেও এসি বিক্রি বেড়েছে। যে গরম পড়ছে তাতে বাসায় বৃদ্ধ বাবা-মা রোজায় খুব কষ্ট পাবে। বাচ্চারাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। তাই এসি ছাড়া চলছে না।’

বেস্ট ইলেকট্রনিকসের শোরুম ইনচার্জ জুনায়েদ বলেন, ‘গত দুই বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন এসি-ফ্রিজের বিক্রি অনেক বেশি। সঙ্গে অনেকে এয়ারকুলারও কিনছে। এ বছর অনেকগুলো ব্র্যান্ড তাদের পণ্যে ছাড় দিয়েছে। তাই দামও স্বস্তিদায়ক। এতে করপোরেট কোম্পানি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেরও প্রচুর অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে।’

রাজধানীতে সবখানেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিকসের শোরুম। বেশিভাগ শোরুমেই এখন মিলছে এসি-ফ্রিজ। তবে ইলেকট্রনিকস পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল স্টেডিয়াম মার্কেট। এ মার্কেটে প্রায় দুডজন দোকান রয়েছে যারা এসি-ফ্রিজ বিক্রি করেন। আছে সব আমদানি ও সংযোজনকারী কোম্পানিগুলোর শোরুমও। এছাড়া এখানকার বেশিভাগ দোকানে নামকরা সব ব্র্যান্ডসহ নন ব্র্যান্ডের এসি পাওয়া যায়।

স্টেডিয়াম মার্কেটে ঘুরে দেখা যায়, সবগুলো দোকানেই ক্রেতা উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে এক টন, দেড় টন ও দুই টনের এসরি চাহিদা ও বিক্রি বেশি। ব্র্যান্ড, কার্যক্ষমতা ও কোম্পানিভেদে এসব এসির দাম প্রায় চল্লিশ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।

জানতে চাইলে রফিক নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসিতে দুই বছরের ওয়ারেন্টি থাকে বেশি। গরমের কারণে আমাদের দৈনিক এসি বিক্রি হতো ৭০-৮০টি থেকে বেড়ে গত দুই সপ্তাহে ১০০-১৫০টিতে দাঁড়িয়েছে।’ একই মার্কেটের স্যামসাং, সনি র‌্যাংস, এলজি বাটারফ্লাই-এর শোরুম ইনচার্জ ও বিক্রয়কর্মীরা একই ধরনের বিক্রি বৃদ্ধির তথ্য দিয়েছেন।