Print Date & Time : 18 August 2025 Monday 4:49 pm

প্রণোদনার এসএমই ঋণ বিতরণে ফিরেছে গতি

শেখ আবু তালেব: করোনার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) আকারের উদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণে গতি ফিরেছে। এ খাতের জন্য ঘোষিত প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ ঋণের সুবিধার আওতায় এসেছে। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৭৭ শতাংশ বিতরণ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে এমন তথ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি বৃদ্ধিতে ঋণ বিতরণে আগ্রহ বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। কভিড-১৯-এর ধাক্কায় স্থবির হওয়া অর্থনীতিতে গতি আনতে বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজের ঘোষণা করা হয়। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) আকারের উদ্যোক্তাদের জন্য রাখা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, গত ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবে ব্যাংকগুলো সিএসএমই খাতে ১৫ হাজার ৩৮৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ঋণগ্রহীতার সংখ্যা হচ্ছে ৯৭ হাজার ৮১৪। এর মধ্যে নারী গ্রহীতা হচ্ছেন পাঁচ হাজার ৪৩৫ জন। তারা ঋণ নিয়েছেন ৭৫৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দ্বিতীয় দফায় সিএসএমই খাতের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। গত জুলাই থেকে দ্বিতীয় দফার প্রণোদনা প্যাকেজের বস্তবায়ন শুরু হয়। সেই প্যাকেজের আওতায় এ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে এক হাজার ৭৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সুবিধাভোগীর সংখ্যা হচ্ছে ১৩ হাজার ৩০৪ জন। এর মধ্যে নারী গ্রাহক হচ্ছেন এক হাজার আটজন। এ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

জানা গেছে, শুরু থেকেই নানা অজুহাতে ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে অনীহা দেখায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপ, সতর্কতা, ঋণ নিশ্চয়তা স্কিম (ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম) গঠনসহ নানা উদ্যোগও নিয়েছিল। ঋণ দেয়ার বিভিন্ন শর্তও শিথিল করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট রিস্ক গ্যারান্টি স্কিম ঘোষণা করে।

কিন্তু তারপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এতে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সাড়াও পাওয়া গেছে। এ ঋণের সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৯ শতাংশ। এর মধ্যে সাড়ে চার শতাংশ সরকার দেবে, বাকি সাড়ে চার শতাংশ ব্যাংককে দেবেন উদ্যোক্তারা।

জানা গেছে, ঋণ বিতরণের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা করেছে, ব্যাংক নিজে সরাসরি বা কোনো এজেন্টের মাধ্যমেও এ ঋণ দিতে পারবে। কিন্তু বারবার নির্দেশনা দেয়ার পরও ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহী হচ্ছিল না প্রথম দিকে। যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছে,  সিএমএসএমই খাতের ঋণগুলো সাধারণত ছোট আকারের হয়। ঋণ মঞ্জুরসহ সব ধরনের প্রক্রিয়া অন্যান্য বড় আকারের ঋণ মঞ্জুরের মতোই। এতে বেশি কাজ করতে হয়। এজন্য এ খাতের ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো আগ্রহ দেখায় না খুব একটা। অন্যদিকে শুধু মৌখিক ভর্ৎসনা ছাড়া তেমন শাস্তির প্রক্রিয়ায় যায় না বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে অতীতেও অধিক মুনাফার করপোরেট ঋণ ছাড়া অন্যান্য ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।

এরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করে, প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন না করলে ব্যাংকগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তবে কী শাস্তি দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট কোনো ধারণা দেয়নি। শুধু জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকা বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহƒত হবে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং কমিয়ে দেওয়া। এরপরই গতি আসে ঋণ বিতরণে।

জানা গেছে, প্রথম দফার ২০ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই বিতরণ করা হবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ঋণ বিতরণে বেসরকারি খাতের প্রচলিত সুদভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ১০ হাজার ৫৭৯ কোটি এবং ইসলামি ধারার জন্য পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর জন্য দুই হাজার ৯৭৩ কোটি টাকার এবং বিশেষাায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি) ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৭০ কোটি টাকার। এছাড়া ৫৮৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হবে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) মাধ্যমে।