প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন রোধে কঠোর পদক্ষেপ কাম্য

বছরের পর বছর স্বাস্থ্যসম্মত মল্টেড খাদ্য হিসেবে বাজারজাত হয়ে আসছে হরলিকস। এটি স্বাস্থ্যসম্মত কি না, এ বিষয়ে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষাও করানো হয়নি। অথচ পণ্যটির মোড়কে এর বিভিন্ন উপকারিতার কথা লেখা। এসব লেখার সমর্থনে আবার বলা হয়েছে, ‘ক্লিনিক্যালি প্রমাণিত’। এমন সব চটকদার কথা লিখে পণ্য বাজারজাত করার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে হরলিকসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর শুনানিতে উল্লিখিত যুক্তি তুলে ধরে শেয়ার বিজ গতকাল একটি সংবাদ প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, আদালতের শুনানিতে বিজ্ঞাপনে উল্লিখিত বিভিন্ন উপকারিতার প্রমাণ দিতে পারেনি হরলিকস কর্তৃপক্ষ। এর আগেও হরলিকসের পণ্য বাজারজাত করার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শেয়ার বিজ সংবাদ প্রকাশ করেছিল।
পণ্যটির বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ লিমিটেড কনজুমার সার্ভিসেস (জিএসকে) এবং প্রস্তুত ও মোড়কজাতকারী প্রতিষ্ঠান মিউচুয়াল ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড। দীর্ঘদিন ধরে জিএসকে হরলিকসের মোড়কে পণ্যের নামের ওপর টলার (লম্বা), স্ট্রংগার (শক্তিশালী), শার্পার (মেধা বা বুদ্ধি) লিখে আসছে। অর্থাৎ নিয়মিত হরলিকস পান করা শিশুরা সমবয়সী অন্যদের তুলনায় দ্রুত বেড়ে উঠবে এবং বেশি মেধাবী হবে ইত্যাদি। কিন্তু কোন পরীক্ষার ভিত্তিতে তারা এ ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। এটা এক ধরনের প্রতারণা বলেই বিবেচিত হবে।
বাণিজ্য প্রসার বা বিক্রি বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সন্দেহ নেই। এর ওপর ভিত্তি করেই পণ্যের বিক্রি বাড়াতে বা বাজারের প্রসার ঘটাতে বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা হয়। মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর ও চটকদার কথা বলে পণ্য বাজারজাত করা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশেষত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার গর্হিত অপরাধ। গর্ভবতী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি যে কোনো জনগোষ্ঠী বা জাতির জন্য স্পর্শকাতর। এটি একটি দেশের অন্যতম উন্নয়ন সূচকও বটে। কোনো প্রকার গবেষণা ছাড়াই সেই গর্ভবতী মায়েদের বা শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নের কথা বলে হরলিকসের বিজ্ঞাপন প্রচার করাকে বড় মাপের অপরাধ হিসেবেই দেখা উচিত। উন্নত দেশে এমন বিজ্ঞাপন কোনোভাবেই প্রচারযোগ্য নয়। শুনানিতে বলা হয়েছে, বিএসটিআইয়ে এমন পরীক্ষার সুযোগ নেই। তাহলে হরলিকস প্রস্তুত বা বাজারজাতকারীরা তাদের বিজ্ঞাপনের ভাষার সপক্ষে কোন গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছেন? কোন গবেষণায় তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, হরলিকস সবল পেশি, অধিক মনোযোগ, স্বাস্থ্যকর রক্ত এবং সঠিক ওজন বৃদ্ধি ঘটায়? এসব বিষয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না করে কীভাবে তারা লিখলেন যে, এটা ‘প্রমাণিত’?
পণ্যের প্রসারের জন্য বিজ্ঞাপন নির্মিত ও প্রচারিত হবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যা প্রমাণিত নয় বিশেষত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিষয়, তা বিজ্ঞাপনে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। হরলিকস তাদের বিজ্ঞাপনে ব্যবহƒত ভাষার পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হলে আইনানুগ শাস্তি হোক তাদের। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ভোক্তার সঙ্গে যদি প্রতারণা করা হয়ে থাকে, তাহলে সেটিও বিজ্ঞাপন আকারে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হোক। অন্যথায় যে কেউ পণ্য উৎপাদন বা আমদানি করে বিজ্ঞাপনের নামে ভোক্তাদের বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেবে। তাই এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থানই কাম্য। ব্যবসায় প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপনসহ যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধে দেশে সক্রিয় বণিক সংগঠনগুলোও ভূমিকা রাখতে পারে। কেবল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত থাকাটাই তাদের কাজ হতে পারে না।