প্রতিবেশীদের চেয়ে এলপিজির বাড়তি দাম কাম্য নয়

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বা এলপিজি অতি প্রয়োজনীয় একটি পণ্য। মূলত বাসাবাড়িতে রান্নার কাজেই এর ব্যবহার বেশি। এর বাইরে হোটেল-রেস্তোরাঁ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক কাজে এলপিজির ব্যবহার হয়। তবে এলপিজির বৃহৎসংখ্যক গ্রাহকই হচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগোষ্ঠী। কাজেই এ পণ্যটির দাম বাড়লে আপামর সাধারণ মানুষ সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন। আর বিষয়টি আরও বেশি দৃষ্টিকটূ হয়ে ওঠে, যখন এটির দাম পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বেশি হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও পুনরায় দাম বাড়ানো কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এলপিজির দাম দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সম্প্রতি ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১৪৪ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর ফলে বর্তমানে এর দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৮৪ টাকা। যদিও গ্রাহকদের এটি কিনতে ব্যয় হয় এক হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত দামে এলপিজি কিনতে পারেন না ভোক্তারা। অন্যদিকে ভারতের গ্রাহকরা প্রতিটি ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার কিনতে পারেন ৭৬৩ রুপিতে। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ এক হাজার ১৩ টাকা। এমনকি ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ পাকিস্তানেও বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ৩৪ টাকা এবং শ্রীলংকার মতো দেউলিয়া অর্থনীতির দেশে মাত্র ৯৮৩ টাকায় পাওয়া যায় ১২ কেজির এক সিলিন্ডার এলপিজি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বাজারে বাড়তি দামে এলপিজি বিক্রি হওয়া গ্রহণযোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই দায়িত্ব নেয়া উচিত। বাজার মনিটরিং জোরদার করাসহ যেসব প্রতিষ্ঠান এলপিজি বাজারজাত করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো আবশ্যক।

চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে মূল্যস্ফীতির উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। সরকারি হিসাবেই মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে অধিকাংশ মানুষের সরকারের এ পরিসংখ্যানের প্রতি আস্থা নেই। সাধারণ ক্রেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, দেশে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি সরকার ঘোষিত মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে আরেক দফা এলপিজির দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এলপিজি মূলত বিদেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। এটির আমদানিমূল্য নিশ্চয় শ্রীলংকা ও নেপালের তুলনায় বেশি নয়। তা সত্ত্বেও কী কারণে বাংলাদেশে এলপিজির দাম বাড়ানো হলো তা বোধগম্য নয়। সরকারি সংস্থার উচিত জনস্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া। কিন্তু বিইআরসির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এলপিজি বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলোর স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে এলপিজির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিইআরসির আরও বেশি প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়া উচিত ছিলো। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আশপাশের দেশের এলপিজির বাজার যাচাই করে দেশে এলপিজির দাম পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি ভেবে দেখবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।