নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারির প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। তবে করোনার এ আঘাত থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ আমদানি পণ্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে এসব মূল্যায়ন করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গতকাল এক বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি এ কথা জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর আইএমএফের আর্টিকেল-৪ মিশনের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। দেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি ও নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক করে।
গত ৫ থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা বৈঠকগুলো করেন। সফরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় তাদের পর্যবেক্ষণ আনুষ্ঠানিক তুলে ধরল আইএমএফ। এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইএমএফ কর্মকর্তা রাহুল আনন্দ। যদিও সংস্থাটি জানিয়েছে, মূল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে আরও পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর। প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলাদেশে আসা প্রতিনিধি দলের বক্তব্য।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, করোনা সংক্রমণের হার কমে আসায় এবং সরকারের অনুকূল নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ছয় দশমিক ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।
মহামারির শুরুর ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল তিন দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হওয়ার হিসাব দেয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সাত দশমিক দুই শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশ ছয় দশমিক চার শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ছয় দশমিক আট শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
এ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি পাঁচ দশমিক তিন শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। তবে গত অক্টোবরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ছিল পাঁচ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা গত কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে। আইএমএফ বলছে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য, বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়ায় অর্থবছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সরকারের হিসাবের চেয়ে কিছুটা বেশি হবে।
স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে মহামারির কারণে ব্যয় বাড়ায় এ অর্থবছর সরকারের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ছয় দশমিক এক শতাংশ। তবে মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি এ অর্থবছর আরও বাড়বে বলেই আইএমএফ মনে করছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে মূল্যস্ফীতির দিকে নজর রাখা এবং প্রয়োজনে বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা। মহামারির মধ্যে গত দুই বছরে সরকারের ধার বেড়ে গেলেও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং দেশে টিকাদান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঋণের বোঝা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে খুব বেশি ঝুঁকি দেখছে না আইএমএফ।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এই গতিপথ ধরে রাখতে পারলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সাত দশমিক এক শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে আইএমএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। তবে সার্বিক বিবেচনায় সামনের দিনগুলোতে যে বেশ কিছু অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি রয়েছে, তাও জানিয়েছে আইএমএফ।
রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদনমুখী বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের নীতি কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। ক্ষত সারিয়ে অর্থনীতি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য সরকারের সহযোগিতা দিয়ে যাওয়া জরুরি। সেই সঙ্গে বিদ্যমান দুর্বলতাগুলোও কাটিয়ে উঠতে হবে। সে জন্য রাজস্ব খাতের আধুনিকায়ন, রাজস্ব ব্যয়ের যৌক্তিকীকরণ, সঞ্চয়পত্রকে বাজেটের সরাসরি অর্থায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত না রাখা এবং জ্বালানির দাম নির্ধারণে একটি আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে আইএমএফ।
