নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। আসছে নিত্য-নতুন প্রযুক্তি। দেশি-বিদেশি নানা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে বাংলাদেশে। এ অবস্থায় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর ব্র্যান্ডিং আরও জোরদার করতে হবে। সে জন্য বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর নির্বাহী পদে বাংলাদেশিদের আসতে হবে। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্ম ও এর ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।
বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তাদের সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।
গতকাল রাজধানীর রেডিসন হোটেলে ‘ঢাকা সিএক্সও সামিট-২০১৮’ শীর্ষক এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ডেইলি স্টার ও লাইট হাউজের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল লংকাবাংলা, মাস্টারকার্ড, র্যাঙ্কন ও সেভেন রিংস সিমেন্ট।
দিনব্যাপী এ সম্মেলনে কী নোট আলোচনায় বক্তব্য রাখেন গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের কান্ট্রি হেড স্বপ্না ভৌমিক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান ও. রশিদ।
সম্মেলনে আরও পাঁচটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বহুজাতিক কোম্পানির প্রতিনিধি, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ উদ্যোক্তা, প্রধান নির্বাহী, বিশেষজ্ঞরা। এসব আলোচনায় দেশের অর্থনীতির টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা। এতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোহজাদ মুনিম, মাস্টারকার্ডের কান্ট্রে ম্যানেজার সাঈদ এম কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত উল ইসলাম, সহজ ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির, রবির সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব আহমেদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানিতে বাংলাদেশি পেশাজীবীরা নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানে পৌঁছেছে। তারা এখন বাংলাদেশকেই পণ্য ও শিল্পের মূল গন্তব্যে পরিণত করতে কাজ করছেন। আগে মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের মতো ক্রেতা ব্র্যান্ড ৫০ লাখ ডলারের পণ্য কিনতো বাংলাদেশ থেকে। এখন তারা ৮০ কোটি ডলার কিনছে। সামনে তারা বিলিয়ন ডলারের পোশাক কিনবে শুধু বাংলাদেশ থেকে। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশিরা প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য পদে কর্মরত থাকার কারণে। এখন আগামী প্রজšে§ও নেতৃত্ব স্থানীয় পেশাজীবী গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য তাদের দক্ষতা বিকাশের কোনো বিকল্প নেই।
বক্তারা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবসার কৌশল নির্ধারণ, বাস্তবায়ন, দক্ষ মানবসম্পদ এবং উদ্ভাবনী শক্তির গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
বক্তারা বলেন, কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও কৌশলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। সে সঙ্গে তাদের অবদানের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যের সমন্বয় করতে হবে। এ সময় ভবিষ্যতের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নবীন ও প্রবীণ পোশাজীবীদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার পরামর্শও দেওয়া হয়। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তি নির্ভরব্যবস্থা রয়েছে। এর সংস্কার করে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, দেশে প্রথমবারের মতো শীর্ষ স্থানীয় করপোরেট কর্মকর্তাদের নিয়ে সম্মেলন আয়োজিত হলো। তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভালো চর্চা ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের জন্য ধারাবাহিকভাবে এ সম্মেলনটি আয়োজন করা হবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কৌশল, উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নের দক্ষতা বৃদ্ধিতে নিজেদের জ্ঞান ও ধারণার আদান-প্রদানে এ সামিটকে একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আয়োজক প্রতিষ্ঠান লাইট হাউজের প্রধান নির্বাহী নাজমুস আহমেদ আলবাব বলেন, ‘বৃহৎ পরিসরে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিক নেতৃত্বের সর্বোত্তম অনুশীলন নিয়ে ভাবনার আদান-প্রদান করাই আমাদের লক্ষ্য। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দ্বার উšে§াচনের মুহূর্তে রয়েছে। এ সময় ভবিষ্যতের প্রতিকূলতা সম্মুখীনে নেতৃত্বের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করা সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।