Print Date & Time : 18 July 2025 Friday 2:43 am

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও কর্মীদের দায়িত্ব

প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সম্পর্কে সহজভাবে বলা যায়, কোম্পানির পণ্য, পণ্যের ক্রেতা এবং প্রক্রিয়া বা পরিষেবা নিয়ে কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের চাকরির মেয়াদকালে কাজ করে, কিংবা কাজের মধ্য দিয়ে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে গোপনীয় তথ্য জানতে পারে।

আমরা যারা দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, হয়তো এ বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিই না, বা দেয়ার প্রয়োজন বোধ করি না, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অধিকাংশ কোম্পানির এ-জাতীয় নির্দিষ্ট পলিসি থাকে না। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নিয়মকানুন লক্ষ করা যায়, তা কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন ধরি, প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তার বিষয়ে বিভিন্ন নিরীক্ষার চাহিদাকে পরিপূরণ করার জন্য আমরা হয়তো ডেটা সংরক্ষণ পলিসির মতো অন্যান্য পলিসি তৈরি করি, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ।

অপরদিকে আমরা যদি বহুজাতিক বা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করি, সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থরক্ষায় তারা কতটা গুরুত্ব দেয় তা আমরা অনুধাবন করতে পারব।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ব্যক্তিস্বার্থ আর প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যেক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য পায়, সেক্ষেত্রে একটি বড় বিপত্তি ঘটে যাকে এক কথায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়।

কিছু ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়, কর্মীরা বুঝে কিংবা না বুঝেও এমন কিছু কাজ করে ফেলে, যা সরাসরি কোম্পানির স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ও পেশাগত উভয় ক্ষেত্রেই আনুগত্য থাকা জরুরি, নচেৎ আমরা যেমন না জেনে অনেক পাপ করি, সে ধরনের একটি অপরাধে আমরা জড়িয়ে পড়তে পারি, আমাদের চাকরির অবসান ঘটাতে পারে, কিংবা আইনি জটিলতায় ফেলতে পারে। এই উভয় স্বার্থকে ব্যাল্যান্স করে চলা অত্যন্ত জরুরি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে কম প্রাধান্য দিয়ে হলেও পেশাগত স্বার্থের দায়িত্বগুলো খুব গুরুত্বসহ পালন করতে হয়।

প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু উদাহরণ দিচ্ছিÑক. কোম্পানির গোপনীয় তথ্য জেনে বা না জেনে কোম্পানির বাইরের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জানানো; খ. ক্লায়েন্টের কোনো তথ্য অথবা গোপনীয় বিষয় প্রকাশ করা; গ. কোম্পানি কিংবা ক্লায়েন্টের কোনো সম্পদ অপব্যবহার, কিংবা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা; ঘ. কোম্পানির কোনো দলিল-দস্তাবেজকে কোনোভাবে বিকৃত করা; ঙ.  কোম্পানির দেয়া ফোন অথবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম, যেমন ইমেইল নিজের ব্যক্তিগতকাজে ব্যবহার করা; চ. কোম্পানির দেয়া ইন্টারনেট সেবার অপব্যবহার; ছ. কোম্পানির কোনো কপিরাইট কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে অন্যকে দেয়া; জ. কোম্পানির কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করা; ঝ. কোম্পানিতে কর্মরত অবস্থায় বিনা অনুমতিতে একই ধরনের কিংবা ভিন্ন কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখা; ঞ. কোম্পানির কোনো ক্লায়েন্টের সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত ব্যবসায় নিজেকে জড়ানো; ট. ক্লায়েন্টের সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা, যা কোম্পানির স্বার্থকে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে; ঠ. একজন ক্লায়েন্টকে নিজের কিংবা নিজের কোনো আত্মীয়ের মালিকানাধীন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেয়া; ড. যোগ্য কিংবা অযোগ্য কোনো আত্মীয়কে কোম্পানিতে বিনা অনুমতিতে নিয়োগ দেয়া, কিংবা ব্যবসার সুযোগ করে দেয়া।

উপরোল্লিখিত উদাহরণগুলো ছাড়াও আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে, কিন্তু যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা যে কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছি, তার স্বার্থ রক্ষার গুরুদায়িত্ব রয়েছে। একটি ছোট ভুল আমাদের অনেক বড় সমস্যায় ফেলতে পারে। সুতরাং এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোয় আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থাকা জরুরি।

তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল

উত্তরা, ঢাকা