সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ায় বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম ও জাহাজভাড়া বাড়ছে। অন্যদিকে দেশের বাজারে ডলার সংকটে এলসি খোলা যাচ্ছে না। ফলে কাঁচামালের সংকটে বন্ধ হয়ে যায় ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান। এতে ভোক্তার চাহিদা বাড়ছে। আর এ চাহিদার কারণে প্রতিনিয়ত ইস্পাত পণ্যের দাম বাড়ছে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রতি টন ইস্পাতের দাম বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় লাখ টাকায় ঠেকেছে।
২০২০ সালের শুরুতে ইস্পাতের টনপ্রতি দাম ছিল ৫৮ হাজার টাকা। এরপর কভিডকালে ইস্পাতের দাম টনে বেড়ে ছিল ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০২১ সালের শুরুর দিকে টনপ্রতি দাম ছিল ৭৬ হাজার টাকা। আর ২০২২ সালে টনপ্রতি রডের দাম প্রায় এক লাখ টাকা। একই অবস্থা দেশের পুরোনো জাহাজ ভাঙা ইয়ার্ডগুলো থেকে পাওয়া স্ক্র্যাপের, দামও বেশি। আর আন্তর্জাতিক বাজারের পুরোনো জাহাজের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। একইভাবে ইস্পাত উৎপাদনে ব্যবহƒত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের দাম বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানিভেদে প্রতি টন ইস্পাতের দাম ৯৬ হাজার ৫০০ থেকে ৯৯ হাজার টাকা চলছে। এর মধ্যে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের উৎপাদিত ইস্পাত প্রতিটনের দাম ৯৯ হাজার টাকা, একেএসের দাম ৯৮ হাজার টাকা এবং কেএসআরএম ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা। অন্য কোম্পানিগুলোর রড প্রতিটনের দাম ৯৬ হাজার টাকা থেকে ৯৭ হাজার টাকা।
বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১০ সালের কোম্পানিভেদে প্রতিটনে দাম ছিল ৪২ হাজার টাকা, যা ২০১৫ সালে ছিল ৫৩ হাজার টাকা। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ছিল ৪৮ হাজার এবং ২০১৯ সালের মার্চ ও এপ্রিলে ছিল ৫৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালের শুরুতে ইস্পাতের টনপ্রতি দাম ছিল ৫৮ হাজার টাকা।
ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেন, ব্যাংকগুলো চাহিদামতো ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে প্রতি টন ফেরাস স্ক্র্যাপ, কাঁচামাল ও কেমিক্যালস আমদানি খরচ ১০-১১ হাজার টাকা বেড়েছে। আর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ার সরাসরি প্রভাব পড়ছে উৎপাদন খরচে। এতে আগের চেয়েও বেশি উৎপাদন খরচ হচ্ছে। নির্মাণ মৌসুমও চলছে। সব মিলিয়ে দাম বাড়ছে। ইস্পাত কারখানারগুলো মাসে উৎপাদন সক্ষমতা আছে ছয় থেকে সাত লাখ টন। কিন্তু উৎপাদিত হচ্ছে দুই লাখ টনের কাছাকাছি, যা মোট সক্ষমতার ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ মোট সক্ষমতার প্রায় ৭০ শতাংশ উৎপাদন করা যাচ্ছে না, ফলে দাম বাড়ছে।
এ বিষয়ে একেএস স্টিলের এরিয়া ম্যানেজার কামরুজ্জামান ফরহাদ বলেছেন, মূলত ডলার সংকটের কারণে রড উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানি তেমন হচ্ছে না। আবার লোকাল স্ক্র্যাপও টনপ্রতি ৭১ হাজার টাকা। অন্যদিকে কাঁচামাল সংকটে বহু ছোট ছোট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বড় বড় ইস্পাত উৎপাদনকারী
কারখানাগুলোয় ইস্পাতের চাহিদা বাড়ছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তুলে ফেলার হার বেড়েছে, যা নতুন বাড়ি করার কাজে বিনিয়োগ হয়েছে। ফলে সবমিলিয়ে চাহিদার তুলনায় কাঁচামালের সংকট আছে। এ কারণে ইস্পাতের দাম লাখ টাকার মতো। আর নির্মাণ মৌসুম হওয়ায় দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সদস্যরা বলেন, প্রয়োজনীয় এলসি সুবিধা না পাওয়ায় ৬০ শতাংশের মতো পুরোনো জাহাজ আমদানি কমেছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারের জাহাজের দাম বেশি। আমরা সাধারণত ৪৮ হাজার টনের জাহাজ কিনতাম, এখন পরিস্থিতির কারণে ১০-১২ হাজারের টনের জাহাজ আমদানি করছি। আগে পুরোনো জাহাজ ব্যবসায়ীরা মাসে ২২-২৫টি জাহাজ আমদানি করলেও এখন করে চার-পাঁচটি জাহাজ।