Print Date & Time : 24 July 2025 Thursday 2:19 am

প্রত্যাশিত অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় ব্যাহত অগ্রগতি

সাইফুল আলম সাঈদ সবুজ: চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে দুটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বরাদ্দের অনুকূলে দুই দফায় অর্থ ছাড় দেয়া হয় মাত্র ২৬৬ কোটি টাকা, যা বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ। এ অর্থ ছাড়করণের আগেই ব্যয় হয়ে যায়। ফলে প্রয়োজনীয় অর্থ সংকটের কারণে গত অর্থবছরে প্রত্যাশিত গতিতে কাজ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

চউক সূত্র্রে জানা যায়, এ প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ভৌত ও অবকাঠামোগত কাজ করবে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ভৌত অবকাঠামোগত কাজ ৫৫ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি প্রায় ৪১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। মূলত করোনাকালে সংকট, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না পাওয়াসহ নানা কারণে এ প্রকল্পের কাজ প্রত্যাশিত গতিতে এগোচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত চার অর্থবছরে এ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে এক হাজার ৫১০ কোটি টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে জানা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছিল ৭০৯ কোটি টাকা। এছাড়া চউক প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় ছয় হাজার ৫১৬ কাঠা জমি অধিগ্রহণের কাজও শুরু করতে পারছে না। এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হতে যাচ্ছে।

চউকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামোগত কাজ গত জানুয়ারি পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ। প্রকল্পের অধীনে পাঁচ খালে রেগুলেটর নির্মাণকাজের ৮৫ শতাংশ ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ছয়টির কাজ চলমান। খালের পাড়ে ১৭৬ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়ালের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার শেষ হয়েছে। ২০ কিলোমিটারের কাজ চলমান। ৮৬ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের মধ্যে তিন কিলোমিটার শেষ হয়েছে। চার কিলোমিটারের কাজ চলছে এবং ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ নির্মাণের মধ্যে ১৪টির কাজ শেষ হয়েছে। ১৫ কিলোমিটার রোড সাইড ড্রেন নির্মাণসহ নতুন ১১ কিলোমিটার ড্রেনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া অন্য কাজগুলো পরিকল্পনা অনুসারে সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর প্রকল্প পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহ আলী শেয়ার বিজকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় জামাল খান ও বদর খালী খালে কাজ করা হয়নি। করার সুযোগ নেই। একই কারণে বন্যার পানি সংরক্ষণের জন্য শহরের তিন প্রান্তে তিনটি জলাধারের তৈরির কাজও শুরু হয়নি। চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আর্থিক ও ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না। এতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়বে। তবে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা নেই। অপরদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দুই হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাখতাই খাল পর্যন্ত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণের অপর একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পও চলছে ধীরগতিতে। ২০১৭ সালে শুরু প্রকল্পটির মেয়াদও গত বছরের জুনে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পে খালে ১২টি রেগুলেটর ও ৯ দশমিক ৪০ মিটার সড়ক কাম বাঁধ নির্মাণের কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের অর্ধেক কাজ এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও চউকের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ শেয়ার বিজকে বলেন, এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১২টি রেগুলেটরের মধ্যে ১০টির কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাকি দুটির কাজ পর্যায়ক্রমে ধরা হবে। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে রেগুলেটরের নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া সড়ক নির্মাণের কাজও চলমান। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ২০২২ সালে কাজ শেষ হতে পারে।