শেখ আবু তালেব: সমালোচনার ঝড়ের মধ্যেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই খুললো এক হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা। প্রথম দিনেই গণহারে খোলা হল কারখানাগুলো। এতে গার্মেন্ট কর্মীসহ পুরো দেশের নাগরিকদের করোনা ঝুঁকি বেড়ে গেল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশে গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।বিজিএমইএ জানিয়েছে, আজ (২৭ এপ্রিল) পর্যন্ত এক হাজার ১৪৯টি কারখানা খুলেছে।
এগুলো ঢাকার সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার।অবশ্য কারখানা খুলতে কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সদস্যদের।নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় ২৬ মার্চ থেকে।
তা পরবর্তীতে কয়েক দফায় বৃদ্ধি করা হয় গত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। করোনার ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরে সাধারণ ছুটি আগামী ৫ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। অথচ ২৬ এপ্রিল থেকে তৈরি পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিএমইএ।
এজন্য ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা-ময়মনসিংহ, গাজীপুর, সাভার, টাঙ্গাইল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনার জন্য বাস চলাচলের অনুমতি চেয়েছিল বিজিএমইএ। এজন্য গত ১৫ এপ্রিল বিআরটিসির কাছে এক পত্র দিয়েছিল বিজিএমইএ।
কিন্তু সুশীল সমাজে ও গণমাধ্যমে সামালোচনার ঝড় উঠে বিজিএমইএর বিরুদ্ধে। সমালোচানার পরে বিজিএমইএ সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ায়। ঘোষণা দেয়া হয়, কারখানা খোলা হবে না। শ্রমিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও জানানো হয়।কিন্তু ২৬ এপ্রিল থেকেই কারখানা খুলেছে।
এর পূর্বে সরকারের পক্ষ থেকে গত ২৩ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, উৎপাদনশীল খাতের কারখানা চালু রাখা যাবে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তৈরি পোশাক খাতের মালিকরাই চাপ দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা নিয়েছে, যাতে কারখানা খোলার দায় বিজিএমইএর ঘাড়ে না যায়।অথচ সারা দেশে এখনো লকডাউন চলছে।
এজন্য গণপরিবহনসহ সবধরনের যানবাহনও বন্ধ রয়েছে। শুধু জরুরি সেবার গাড়ী চলাচল করছে। এজন্য শ্রমিকদের কর্মস্থলে যেতে হয়েছে রিক্সা, ভ্যান, অটো, মটরসাইকেল ও পায়ে হেঁটে।আজ (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশে করোনা শনাক্তের ৫১তম দিন। এই দিনেও সারাদেশে নতুন করে ৪৯৭ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে পাঁচ হাজার ৯১৩ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৫২জন। সরকারি এ হিসাবটি দিয়েছে আইইডিসিআর। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এর পূর্বেও গত ৪ এপ্রিল কারখানা শ্রমিকদের বাধ্য করেছিল ঢাকায় ফিরতে।
বেতন ও চাকরি বাঁচানোর তাগিদে লাখ লাখ শ্রমিক করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে ঢাকায় ফেরে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে ঢাকায় আসেন তারা।কারখানা খোলা নিয়ে গত ১৭ এপ্রিল বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেছিলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলেছি। আমরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আগামী ২৬ এপ্রিল কারখানা খোলা হবে না।
আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কিন্তু কোনো মালিক যদি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য কারখানা খুলতে চান, তাহলে শিল্প পুলিশের অনুমোদন ও বিজিএমইএকে জানাতে হবে।”শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ থাকা সাপেক্ষে কারখানা খোলা রাখা যাবে। এর বাইরে যেসব প্রতিষ্ঠান পিপিই ও করোনা মোকাবেলার সামগ্রী উৎপাদন করছে সেসব কারখানাও খোলা রাখা যাবে। গত ১৪ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত এটি নির্দেশনা জারি করা হয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। ##