প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে গুরুত্ব পাক রোহিঙ্গা ইস্যু

বহুদিন ধরে সৃষ্ট সংকটের এক পর্যায়ে রোহিঙ্গারা যখন ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ ও নির্যাতনের শিকার হলো, তখন মিয়ানমারে উপস্থিত জাতিসংঘের প্রতিনিধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি সারা বিশ্ব তখন রোহিঙ্গাদের দিকে চোখ রেখেছে কেবল ব্যর্থ চোখে। সে সময় বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি বেশ পোক্ত হাতেই মোকাবিলা করে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এমন অনিশ্চিত ভাগ্যবিড়ম্বনা কেবলই এ অঞ্চলের শান্তি প্রক্রিয়া ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। নিশ্চিত করে বলা যায়, বৃহত্তর উপসাগরীয় অঞ্চলে এ সংকট চীনসহ কারও জন্যই শুভকর হবে না। আগামী ১ থেকে ৫ জুলাই চীন সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি চীনা নীতিনির্ধারকদের মাথায় আন্দোলিত করতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
রোহিঙ্গাদের কারণে কলেরা, এইডস, বন উজাড়, পাহাড় বিনষ্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ইস্যুটি উপসাগরীয় অঞ্চল ও আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ রেষারেষিতে আঞ্চলিক শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন যদি মিয়ানমারকে মদত দিয়েও থাকে, তবে মিয়ানমার, বাংলাদেশ ও ভারতে চীনের বিনিয়োগের স্বার্থে সে অবস্থান তাদের পাল্টানো উচিত। রোহিঙ্গারা তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাকÑচীনের এমন প্রত্যাশার জায়গাকে কার্যকর সিদ্ধান্তে পরিণত করতে হবে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগকে যুক্তরাষ্ট্র যখন এ অঞ্চলে তাদের মোড়লি হারানোর কারণ বলে আশঙ্কা করে, চীন যখন ঋণের ফাঁদ পাতানো অভিযোগে অভিযুক্ত, বাণিজ্য যুদ্ধ ও সংকটকালীন তেল আহরণে আঞ্চলিক স্থিরতা যখন চীনের জন্য অপরিহার্য, তখন এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে চীনকে আস্থা ও অভিভাবকসুলভ বিশ্বস্ততা অর্জন করতেই হবে। উল্লেখ্য, চীন নিজেদের ও বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে তাদের জিশনজিয়াং প্রদেশের গ্র্যান্ড থিয়েটারে প্রায় প্রতিদিনই ‘সিল্ক রোডে ফিরে চলো’ শো দেখিয়ে আঞ্চলিক সাধারণ সাংস্কৃতিক আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন বাংলাদেশকে বরাবরই সহায়তা করছে এবং এ অঞ্চলে চীনের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে, তারপর ভারতে এ ইতিবাচক দিক দুটি প্রধানমন্ত্রীর সফরে বাড়তি সুবিধা দেবে। চীন অবশ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতে যে সমাধানের কথা বলে আসছে, সেই সমাধানে পৌঁছাতে তাদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় রাষ্ট্রে তাদের বিনিয়োগ স্বার্থ মাথায় রেখেই একটি কার্যকর দ্বিপক্ষীয় সমাধানে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অভিভাবকীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
তাই রোহিঙ্গাদের এই বাস্তুচ্যুত, অকর্মণ্য ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ যেন এ দেশ ও অঞ্চলের শান্তি নষ্টের কারণ না হয়, সে বিষয়ে চীনের উদ্যোগ গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর গুরুত্ব পাবে বলে আমরা আশা রাখি।