প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বেহিসাবি খরচ নয়

লেখকঃ রিয়াজুল হক, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

পূর্বে যে পরিবার ১০,০০০ টাকায় সংসার চালাত, সন্তান প্রবাসে যাবার পর ২৫,০০০ টাকা কিংবা ৩০,০০০ টাকায়ও তাদের সংসার যেন চলে না।

পরিচিত অনেক প্রবাসীর সাথে যখন কথা হয়, তখন তারা পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে দেশে আসতে ভয় পায়। কারণ তারা দেশে আসলেই বেকার হয়ে যায়, কোন কাজ পায় না। জীবিকার তাগিদে আমাদের দেশের প্রবাসীদের মধ্যে বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করে। অধিকাংশই নির্মাণ শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী কিংবা কায়িক শ্রম নির্ভর কাজ করে থাকে। বাংলাদেশের টাকায় মাসে ৩৫,০০০ কিংবা ৪০,০০০ টাকা আয় করে। নিজের খরচটুকু রেখে এই প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠায়। ১০/১২ বছর বিদেশে অমানুষিক পরিশ্রম করে করে যখন দেশে চলে আসে, তখন যেন অনেকেই অন্ধকার দেখতে পায়। মাসে মাসে যা পাঠিয়েছে, যেন কিছুই অবশিষ্ট নেই।

আমাদের দেশে ৫৭ ভাগ পরিবার প্রবাস আয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগ করেন না। অর্থ খরচ করেন ভোগ্য পণ্য ব্যয়ে। বাকি ৪৩ শতাংশ পরিবারের ৭৪.৭৮ শতাংশ ব্যয় করে দালান কোঠা নির্মাণ, ফ্ল্যাট বা জমি কেনায়। খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবারের আরাম আয়েসের মাত্রায়। অথচ যে মানুষটি দিন রাত পরিশ্রম করে দেশে অর্থ প্রেরণ করছে, সে যখন দেশে আসবে সে হয়ত তার জন্য সঞ্চিত কিছুই দেখতে পাবে না। পরিবারের সুখ, সমৃদ্ধি এবং সচ্ছলতার কথা চিন্তা করে প্রবাসীরা দেশে আসারও সাহস করেন না। অথচ মন যে পরে থাকে তার প্রিয়জনদের কাছেই। যাদের স্বজন প্রবাসে অবস্থান করছে, তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের উচিত একটু হিসেব করে খরচ করা। ছোট ছোট ব্যবসায় বিনিয়োগ করা। সেটা মুদি দোকানও হতে পারে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, প্রবাসীদের নামে ব্যাংকে টাকা জমা রাখা উচিত। কারণ আজ যে মানষটি প্রবাসে অবস্থান করছে, সবসময় সে প্রবাসে থাকবে না। এক সময় দেশে আসবে। তার আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদের করতে হবে। কারণ সে তার জীবনের মূল্যবান সময় পরিবারের সদস্যদের জন্যেই ব্যয় করেছে।

লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।