Print Date & Time : 8 July 2025 Tuesday 12:35 pm

প্রবাসীদের ভোগান্তির জায়গা নির্বাচন কমিশন অফিস

হামিদুর রহমান: জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়ে নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রবাসীদের অভিযোগ, বাড়তি টাকা না দিলে নানা ভোগান্তি ও কাজের অনিশ্চয়তা। তবে টাকা দিলেই মিলে সমস্যার সমাধান। 

জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভোগান্তিতে থাকা কয়েকজন প্রবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে অনেক জটিল বিষয়েরও সমাধান মেলে। আবার এনআইডিতে ভুল না থাকলেও অনেক সময় নানাভাবে ভোগান্তিতে ফেলা হয়। এনআইডি বিষয়ে নানা জটিলতা নিয়ে প্রতিদিন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ধরনা দেন অনেক প্রবাসী। তাদের কেউ কেউ সমাধান পাচ্ছেন, আবার কাউকে গ্রাম থেকে ঢাকা; ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি দৌড়াতে হচ্ছে। এমন দৌড়াদৌড়িতেই প্রবাসীদের ছুটির প্রায় সবটা ফুরিয়ে যাচ্ছে। এতে তারা নিজের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে সময়ই দিতে পারছেন না।

তারা আরও জানান, অনেক প্রবাসী অল্প সময় নিয়ে দেশে ঘুরতে আসেন বা নানা কাজের প্রয়োজনে আসেন। যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা থাকলেও কোনো সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে, তাদের একগাদা কাগজ-পত্রের তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়। যেগুলো জোগাড় করা সহজ ব্যাপার নয়।

কয়েক বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন শাহরিয়ার নাঈম (ছদ্ম নাম)। তিনি বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়িতে এনআইডি করতে গেলে সেখানে তার কাছে ৩০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। অন্যথায় দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে বলা হয়। অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা দিলে আমার নিজের কিছু করতে হবে না। নির্দিষ্ট সময় পর পাওয়া যাবে এনআইডি। এমনকি দ্বৈত নাগরিকত্বও প্রমাণ করতে হবে না। নির্বাচন কমিশনের লোককে টাকা দিলে তিনিই সব কিছু করে দেবেন। প্রশ্ন হচ্ছেÑআমার সব কিছু ঠিক আছে, কেবল এনআইডি করব আর তাতেই ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে! দেশে সরকারি অফিসগুলোতে যে যেভাবে পারছে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে! এমন পরিস্থিতি দেখে সত্যিই নিজেকে খুব ছোট লাগছে।’

তিনি আরও বলেন, নিজে এনআইডি করতে গেলে সময় বেশি লেগে যাবে। দ্বৈত নাগরিকত্বের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেতে হবে, যা সময় সাপেক্ষ। যে কদিন ছুটি নিয়ে দেশে গিয়েছিলাম, এ কাজ করতে গেলে আমার আত্মীয়স্বজন বা অন্যদিকে সময়ই দেয়া যেত না। সবকিছু চিন্তা করে এ সময়ে এনআইডি ঠিক করার সাহস করিনি। কেননা প্রতিটা পদে ভোগান্তি। রুটিন-মাফিক কোনো কাজ দেশে অসম্ভব। এনআইডি না করেই লন্ডনে চলে এসেছি।

এদিকে আরেক ভুক্তভোগী লন্ডন প্রবাসী শারমিন নাহার। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গেলে আমি প্রবাসী বুঝতে পারায় আমাকে একগাদা কাগজ-পত্রের তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়। যেগুলো জোগাড় করা সম্ভব নয়। পরে দুই হাজার টাকা দেয়ায় আমার আর কিছু করতে হয়নি।

দীর্ঘদিন ধরে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করেন জাবেদ হায়দার। তিনি বলেন, পারিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনা ছাড়াও ব্যক্তিগত নানা প্রয়োজনে প্রায় প্রতি বছরই দেশে আসতে হয়। তবে কয়েক বছর ধরে ঢাকায় এসে আমাকে নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল সিম কিনতে গিয়ে বা ব্যাংকের কিছু কাজ এবং জমির রেজিস্ট্রেশনের মতো কাজ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আর তা করতে পারিনি। কারণ এ ধরনের কাজে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক।

তিনি বলেন, আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য চেষ্টা করেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে ঢাকায় অবস্থানকালে সেটি করতে পারেননি। আমি তো বাংলাদেশের নাগরিক। বিদেশে থাকি বলে আমি জাতীয় পরিচয়পত্র পাব না? ভোটার তালিকায় আমার নাম থাকবে না? আমি চাই লন্ডনে দূতাবাসের মাধ্যমে পরিচয়পত্র দেয়া হোক, যাতে আমরা সহজেই বায়োমেট্রিকসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে পরিচয়পত্র পেতে পারি।

অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমি তিন চার বছর আগে ওমানে গিয়েছিলাম কাজের জন্য। পরে সেখানে যে কাজের কথা বলে নেয়া হয়েছে তা দেয়া হয়নি। উল্টো নানাভাবে নির্যাতন করেছে। পরে দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়। বর্তমানে এখন আমার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ। এখন দুবাইতে যাব, তাই পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে। ওমান যাওয়ার আগে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় জš§নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করেছি। পরবর্তীতে তৈরি করা ভোটার আইডি করা হলেও জš§ নিবন্ধনের সঙ্গে ভোটার আইডির বয়সের মিল নেই। আইড তৈরির সময় বিষয়টি বুঝতে পারিনি। যারা ভোটার আইডির ফরম পূরণ করে দিয়েছে, তারা এটি ভুল করেছে। এখন ভোটার আইডি কার্ড ঠিক করব বলে দুই মাস ধরে ঘুরছি ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ। অথচ ভোটার আইডি কার্ড ঠিক করতে পারিনি। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনআইডির ডিজি এ কে এম হুমায়ুন কবীর শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের বিষয়গুলো অন্তত গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। প্রবাসীদের দ্রুত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে আলাদা ডেস্ক দেয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়মের বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’