প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির ধারা থাকুক অব্যাহত

গত দুবছর নেতিবাচক ধারা চলার পর চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে প্রবাসী আয়ে ১৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটা সুখবর। এর প্রভাব শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার পরিবারে নয়, সামগ্রিকভাবে পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অনেক গ্রামের অর্থনীতি এখন প্রবাসী আয়নির্ভর। এ আয়ে নেতিবাচক ধারার কারণে যেসব গ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে এসেছিল, এখন তাতে গতি আসবে বলেই আশা। আমরা এর ধারাবাহিকতাও প্রত্যাশা করি। এটা নিশ্চিত করা গেলে ওই গ্রামগুলোর অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। মাথাপিছু আয়সহ অন্যান্য মানদণ্ডে উত্তরণের মাধ্যমে নিম্নমধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার যে লক্ষ্যে আমরা এগোচ্ছি, এ ধারা অব্যাহত থাকলে সেটি অর্জন কিছুটা হলেও সহজতর হবে বলে মনে হয়। নানা কারণে প্রবাসী আয়ের ধারা ওঠানামা করতে দেখা যায় মাঝেমধ্যেই। এজন্য অনেক ক্ষেত্রে বৈদেশিক লেনদেনে সৃষ্টি হয় ভারসাম্যহীনতা। আয়ের তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় বেড়ে ওঠায় এ ভারসাম্যহীনতা সব রেকর্ড ভেঙেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রবাসী আয়ের বিদ্যমান প্রবাহ অব্যাহত থাকলে এক্ষেত্রে ঘাটতি কিছুটা হলেও কমানো যাবে। এটা ঠিক, রোজা ও ঈদ ঘিরে প্রবাসী আয় প্রবাহে কিছুটা বাড়তি গতি এসেছিল। পরবর্তী মাসগুলোয়ও প্রবাহটি যেন স্থিতিশীল থাকে, এখন সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
গত দুই বছরে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি কেন হয়েছিল, তার কারণ আর কারও অজানা নয়। ওইসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার কারণেই যে এটি ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে, বিষয়টি সে রকমও নয়। এতে ভূমিকা রেখেছে মূলত ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি। দেশে ও বিদেশে নিয়ম-কানুনে কড়াকড়ির কারণেও ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এক্ষেত্রে পরিপালনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা গেলে দেশও এ থেকে উপকৃত হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় তদারকি প্রত্যাশিত। বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা জনশক্তির সিংহভাগেরই গন্তব্য হলো মধ্যপ্রাচ্য। বেশ কিছুদিন ধরে ওই অঞ্চলে বিরাজ করছে রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষত সৌদি আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে বেশ কিছু নারী কর্মী দেশে ফেরত আসায় ওখানে যেতে এখন অনীহা প্রকাশ করছেন অনেক নারী। এ অবস্থায় নারী জনশক্তি রফতানির নতুন বাজারও খোঁজা দরকার। শ্রমবাজার সম্প্রসারণে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একটি গবেষণা সেল নাকি গঠন করেছে। আমরা চাইব, শুধু প্রবাসী আয়ের ধারা স্বাভাবিক রাখতে নয়, দেশের বিদ্যমান বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিতেও এটি রাখতে হবে অব্যাহত।
এত দিন বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা জনশক্তির সিংহভাগ ছিল অদক্ষ অথবা আধাদক্ষ। তাদের বেতনও ছিল কম। দক্ষতায় ঘাটতি থাকায় তালিকার উপরের দিকে থাকা শ্রমবাজারগুলোয় আমাদের জনশক্তির চাহিদা কমছে প্রতিনিয়ত। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের নিয়োগদাতাদের এমন প্রবণতা সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত। সম্প্রতি জাতীয় বাজেট উপলক্ষে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, নিকট অতীতে দক্ষ জনশক্তি রফতানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তথ্যমতে, ২০০৮ সালে মোট রফতানি করা জনশক্তির মধ্যে দক্ষ ছিল মাত্র ৩৩ শতাংশ। সেটা উন্নীত হয়েছে ৪৩ শতাংশে। এটাও বড় সুসংবাদ। কিছুদিন আগে শেয়ার বিজের প্রতিবেদনেই আমরা লক্ষ করেছি, দক্ষতায় ঘাটতির কারণে বাংলাদেশের কোনো কোনো শ্রমবাজার চলে যাচ্ছে আশপাশের কয়েকটি দেশের জনশক্তির দখলে। আমরা আশা করব, এ পরিস্থিতিতে জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিতে নেওয়া উদ্যোগগুলো জোরদার করা হবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে বৈশ্বিক শ্রমবাজারে চলমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার স্বার্থেই। এ প্রশ্নও এখন ওঠা দরকার, প্রতিবছর দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হওয়া কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশকে আমরা আর কত দিন রফতানি করব ‘শ্রমিক’ হিসেবে? আশপাশের কিছু দেশ কিন্তু অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়েছে এক্ষেত্রে।