সিকিউরিটিজ হাউসের, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে সৃষ্ট ‘আনরিয়েলাইজড লস’ বা ‘নেগেটিভ ইক্যুইটির বা ঋণাত্মক মূলধনের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের সময় বাড়ল। গতকাল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জরুরি সভায় আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি কমিশন সভায় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদন পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে’।
বিএসইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রভিশন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন এ সুবিধা নিতে যেসব সিকিউরিটিজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের নেগেটিভ ইক্যুইটি বা ঋণাত্মক মূলধনের ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে হবে।
এর আগে, পুঁজিবাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটি (ঋণাত্মক মূলধন) সমস্যার সমাধানে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত ২২ এপ্রিল সিকিউরিটিজ হাউসের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আশ্বাস দেয় বিএসইসি। বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ নেগেটিভ ইক্যুইটিকে ‘ক্যানসার’ বলে উল্লেখ করে যত দ্রুত সম্ভব- এর সমাধানে উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সব সংশ্লিষ্ট পক্ষ ও অংশীজনরা মিলে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর জোর দেন। বিএসইসি চেয়ারম্যানের প্রতিশ্রুতির পরই প্রভিশন সংরক্ষণের ঘোষণা এলো।
এর আগে বিএসইসির পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘২০১০ সালে ও পরবর্তী বছরগুলোয় পুঁজিবাজারে সিকিউরিটিজের আকস্মিক দরপতন ও বিভিন্ন অস্বাভাবিক ঘটনার ফলে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন হিসেবে অনাদায়ী ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। দীর্ঘদিন ধরে নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা বইছে হাউসগুলো’ বলে জানানো হয়।
তথ্যমতে, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত ডিএসই এবং সিএসইর সদস্যভুক্ত সিকিউরিটিজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৬৭টি মার্জিন বিও হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীদের মোট মার্জিন ঋণের পরিমাণ ১৮ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। মার্জিন ঋণের মধ্যে ডিএসইর সদস্যভুক্ত সিকিউরিটিজ হাউজগুলো ১১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা মার্জিন ঋণ দিয়েছে এবং তাদের ঋণাত্মক মূলধন ছয় হাজার ৩৩৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। আর সিএসইর সদস্যভুক্ত সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর মার্জিন ঋণের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ও ঋণাত্মক মূলধনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিএসইসির গত ২৭ মার্চ নির্দেশনা জারি করে। সেই নির্দেশনায়, ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রভিশনিংয়ের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সহযোগিতায় ঋণাত্মক মূলধনের সমস্যা সমাধানে একটি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলেও আশা করছেন সংস্থাটির দায়িত্বশীলরা। বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে সিকিউরিটিজ হাউসগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং সংস্কারে বিএসইসিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও কার্যক্রম গ্রহণের অনুরোধ জানান। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারের অবস্থা ও বাজার পরিস্থিতিসহ দেশের পুঁজিবাজারে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা এবং পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক এসময় আলোচনায় ওঠে আসে। এর জের ধরেই ঋণাত্মক মূলধনের বিষয়ে সমাধান দিল বিএসইসি। বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থ বিবেচনায় ঋণাত্মক মূলধনের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের সময় আট মাস বাড়লো।