সাহিত্যিক, গবেষক প্রমথনাথ বিশীর মৃত্যুদিবস আজ। ১৯০১ সালের ১১ জুন নাটোরের জোয়াড়ি গ্রামে জমিদার পরিবারে তার জন্ম। তার পিতা নলিনীনাথ বিশী ছিলেন বৃহত্তর রাজশাহী জেলার মধ্যে প্রথম গ্র্যাজুয়েট এবং প্রভাবশালী জমিদার কেশবনাথ বিশীর দত্তক পুত্র।
প্রমথনাথ ১৯১০ সালে শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। মেধা, প্রখর বুদ্ধিবৃত্তি, অধ্যয়ননিষ্ঠা, কবিপ্রতিভা প্রভৃতি গুণের জন্য রবীন্দ্রনাথ তাকে খুব স্নেহ করতেন। রবীন্দ্রনাথের নিকট তিনি অভিনয় শেখেন এবং পরে তার লেখা কয়েকটি যাত্রাপালা শান্তিনিকেতনে অভিনীতও হয়।
প্রমথনাথ ১৯১৯ সালে শান্তিনিকেতন থেকে ম্যাট্রিক পাস করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯২৭ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। রামতনু লাহিড়ী গবেষণা বৃত্তি (১৯৩৩-৩৬) নিয়ে গবেষণা করার পর ১৯৩৬ সালে তিনি রিপন কলেজে অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
দীর্ঘকাল রিপন কলেজে অধ্যাপনা করার পর ১৯৫০ সালে প্রমথনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে যোগ দেন এবং রবীন্দ্র অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হয়ে ১৯৭১ সালে অবসর নেন। মাঝখানে চার বছর (১৯৪৬-৫০) তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন। প্রমথনাথ কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থেকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা (১৯৬২) এবং রাজ্যসভার সদস্য (১৯৭২) নির্বাচিত হন।
গবেষণার ক্ষেত্রে প্রধানত রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। এক্ষেত্রে রবীন্দ্র কাব্যপ্রবাহ (২ খণ্ড, রবীন্দ্র বিচিত্রা, রবীন্দ্র নাট্যপ্রবাহ (২ খণ্ড, রবীন্দ্র সরণী প্রভৃতি গবেষণাগ্রন্থ তার উল্লেখযোগ্য অবদান। তিনি মধুসূদন ও বঙ্কিম সাহিত্যেরও একজন দক্ষ সমালোচক ছিলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিম সরণী ও মধুসূদন থেকে রবীন্দ্রনাথ তার এ-বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
গবেষণাগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা এবং ব্যঙ্গ রচনার ক্ষেত্রেও প্রমথনাথ প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। কমলাকান্ত, বিষ্ণুশর্মা, অমিত রায়, মাধব্য ও স্কট টমসন ছদ্মনামে তিনি এসব লিখতেন। তার রচিত উপন্যাস ও গল্পের মধ্যে কয়েকখানি প্রধান গ্রন্থ হলো: জোড়াদিঘির চৌধুরী পরিবার, কেশবতী, গল্পের মতো গল্প, ডাকিনী, ব্রহ্মার হাসি, সিন্ধুদেশের প্রহরী, চলন বিল, অলৌকিক, কেরী সাহেবের মুন্সী, স্বনির্বাচিত গল্প, লালকেল্লা প্রভৃতি। দেওয়ালী তাঁর প্রথম কবিতার গ্রন্থ। এছাড়া আছে বসন্তসেনা ও অন্যান্য কবিতা, হংসমিথুন, উত্তরমেঘ, শ্রেষ্ঠ কবিতা প্রভৃতি। ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব, বিচিত্র উপল তার প্রবন্ধগ্রন্থ।
মানবচরিত্রের সূক্ষ্ম অনুভূতিসমূহ সরস ভাষায় অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি বর্ণনা করেছেন। নেহেরু: ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব নামে তিনি একটি রাজনৈতিক গ্রন্থও রচনা করেন। সাহিত্যচর্চা এবং গবেষণায় কৃতিত্বের জন্য প্রমথনাথ রবীন্দ্র পুরস্কার, বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার ও জগত্তারিণী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালের ১০ মে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়।
[সংগৃহীত]