শেয়ার বিজ: ব্যাংক এশিয়া একটি প্রচলিত ব্যাংক। প্রচলিত ধারার ব্যাংক হয়েও ইসলামী ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে। এর কারণ কী?
এবিএম বোরহান উদ্দিন: ব্যাংক এশিয়া এ দেশের বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম ব্যাংক। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ব্যাংক এশিয়া গ্রাহকের চাহিদানুযায়ী প্রযুক্তিনির্ভর অত্যাধুনিক ব্যাংকিং সেবা দিয়ে আসছে। ব্যাংকিংয়ের নীতি ও কর্মপদ্ধতি যথাযথভাবে পরিপালনে ব্যাংকটি বদ্ধপরিকর। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে আমাদের দেশের মানুষের মাঝে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকিং বিষয়ে দিন দিন সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ধর্মপরায়ণ সচেতন মুসলিম জনসাধারণ ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামিক ব্যাংকিংকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বৃদ্ধির কারণে এর মার্কেট শেয়ারও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ধর্মপরায়ণ মুসলিম জনসাধারণকে শরিয়াহ শুদ্ধতায় ব্যাংকিং সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর ‘শুদ্ধতাই আপনার মুনাফা’ সেøাগানকে ধারণ করে ব্যাংক এশিয়া ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। তাছাড়া ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন উদ্যোক্তা তৈরি করা, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার গুণগত ভিত্তি শক্তিশালী করা, ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জন্য উন্নত প্রযুক্তি প্রবর্তন এবং এ খাতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক মুনাফা বৃদ্ধি করাও ইসলামিক ব্যাংকিং চালুর অন্যতম উদ্দেশ্য।
শেয়ার বিজ: ইসলামিক ব্যাংকিং নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? এবিএম বোরহান উদ্দিন: ব্যাংক এশিয়া তার ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে সবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তাছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমকে সহজতর ও গতিশীল করা, দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করারও আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে ব্যাংক এশিয়া ৫টি ইসলামিক উইন্ডোর পাশাপাশি ব্যাংকের সব শাখা, সার্ভিস সেন্টার এবং এজেন্ট আউটলেটে অনলাইনে সকল প্রকার ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নতুন আরও ইসলামিক উইন্ডো এবং ইসলামিক ব্যাংকিং শাখা খোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সকল এজেন্ট আউটলেটকে পর্যায়ক্রমে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের আওতায় আনা হচ্ছে। সকল শ্রেণির গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নতুন নতুন ডিপোজিট এবং বিনিয়োগ সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সহায়তার জন্য পৃথক ইসলামিক ফরেন ট্রেড মডিউল স্থাপন করা হয়েছে এবং ফরেন ট্রেড সংশ্লিষ্ট বিশেষ কিছু সেবা অন্তর্ভুক্ত করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শেয়ার বিজ: ব্যাংক এশিয়া ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের কেমন সাড়া পাচ্ছে?
এবিএম বোরহান উদ্দিন: ইসলামিক ব্যাংকিং সেবায় ইনকাম শেয়ারিং রেশিও বা আইএসআর মডেল প্রবর্তনের মাধ্যমে ব্যাংক এশিয়ার ইসলামিক ব্যাংকিং এ খাতে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। ইনকাম শেয়ারিং রেশিও (আইএসআর) মডেলে ডিপোজিটরদের সঙ্গে মুনাফা ভাগাভাগির ক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত কোনো হার থাকে না। বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয় আনুপাতিক হারে আমানতকারীদের মাঝে বণ্টন করা হয়ে থাকে। শরিয়াহভিত্তিক আইএসআর মডেলের কারণে ব্যাংক এশিয়ার ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বাড়ছে এবং দিনে দিনে ব্যাংক এশিয়া ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংক এশিয়ার ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখের কাছাকাছি এবং ক্রমান্বয়ে এ সংখ্যাটি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেয়ার বিজ: ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগে কোন বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন?
এবিএম বোরহান উদ্দিন: ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের বিনিয়োগ প্রদানে ব্যাংক এশিয়া শরিয়াহ পরিপালনের বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। যথাযথভাবে শরিয়াহ পরিপালন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে ব্যাংকের আয়ে সুদ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ব্যাংক এশিয়া শরিয়াহ পরিপালন নিশ্চিত করে সকল প্রকার হালাল খাতে বিনিয়োগ করে থাকে।
শেয়ার বিজ: ব্যাংক এশিয়ার কয়টি শাখায় ইসলামি উইন্ডো চালু রয়েছে?
এবিএম বোরহান উদ্দিন: ব্যাংক এশিয়ার পাঁচটি শাখায় ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো চালু রয়েছে। তবে সকল শাখা এবং এজেন্ট আউটলেট থেকেও অনলাইনের মাধ্যমে চার্জ ফি ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
শেয়ার বিজ: ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের জন্য কী কী সেবা রয়েছে?
এবিএম বোরহান উদ্দিন: ব্যাংক এশিয়া ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের জন্য নিন্মোক্ত আমানত সেবা রয়েছে:
ক. আল-ওয়াদিয়াহ চলতি হিসাব; খ. মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব; গ. মুদারাবা বিশেষ নোটিশ হিসাব; ঘ. মুদারাবা কপোরেট প্রিভিলাইজড হিসাব; ঙ. মুদারাবা স্মার্ট জুনিয়র সেইভার হিসাব; চ. মুদারাবা স্থায়ী আমানত হিসাব (৩/৬/১২/২৪/৩৬/৬০ মাস মেয়াদি); ছ. মুদারাবা ডিপিএস হিসাব (৩-১২ বছর মেয়াদি; জ. মুদারাবা মাসিক মুনাফা প্রদেয় হিসাব; ঝ. মুদারাবা হজ ডিপোজিট স্কিম; ঞ. মুদারাবা ক্যাশ ওয়াক্বফ্ হিসাব প্রভৃতি। ব্যাংক এশিয়া ইসলামি ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের জন্য নি¤েœাক্ত বিনিয়োগ সেবা রয়েছে:
১. বাই-মুরাবাহা মুয়াজ্জাল (এসএমই, কৃষিসহ সকল খাতে চলতি মূলধন সুবিধা); ২. হাইয়ার পারচেজ শিরকাতুল মিল্ক (এসএমই, কৃষি, কনজিউমারসহ সকল খাতে স্থায়ী সম্পদ ক্রয় বা নির্মাণে টার্ম বিনিয়োগ সুবিধা); ৩. মুশারাকা (এসএমই, কৃষিসহ সকল খাতে চলতি মূলধন সুবিধা); ৪. ক্বরদ (টিডিআর ও ডিপিএস এর বিপরীতে); ৫. এলসি সুবিধা; ৬. বাই-মুরাবাহা পোস্ট ইমপোর্ট (আমদানি-পরবর্তী বিনিয়োগ সুবিধা); ৭. ব্যাংক গ্যারান্টি প্রভৃতি।
তাছাড়া দৈনিক স্থিতির ভিত্তিতে মুনাফা এবং মাসিক ভিত্তিতে চূড়ান্ত হিসাব, সারাদেশে চার্জ ফ্রি অনলাইন সেবা, ভিসা ডেবিট কার্ড, ইসলামিক ক্রেডিট কার্ড, এসএমএস এলার্ট, ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারের মতো আধুনিক সকল সেবাও ইসলামিক ব্যাংকিং গ্রাহকদের জন্য চালু করা হয়েছে।
শেয়ার বিজ: আপনার মতে, ইসলামি ধারার ব্যাংকের প্রসার বাড়ার কারণ কী? এবিএম বোরহান উদ্দিন: আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। যেহেতু ইসলামিক ব্যাংকিং তার নীতি ও কর্মপদ্ধতির সকল স্তরে ইসলামী শরিয়াহর বিধানাবলি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর এবং কার্যক্রম ও লেনদেনের সব পর্যায়ে সুদকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করে, সেহেতু এদেশের ধর্মপরায়ণ মানুষ সুদ থেকে বাঁচার তাগিদে ইসলামিক ব্যাংকিংকে বেছে নিচ্ছেন। ফলে এতদঅঞ্চলে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের দ্রুত প্রসার ঘটছে। ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রমে ব্যাংক টাকার কারবার না করে পণ্যের ব্যবসা করে থাকে। যার ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়। তাই দিনে দিনে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যা এর প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম বেশ স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হয় এবং এ খাতে দুর্নীতি, অসততা, জাল-জালিয়াতিকে কোনোমতেই প্রশ্রয় দেয়া হয় না। যার কারণে সাধারণ মানুষ ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের প্রতি আস্থা পোষণ করছে বিধায় দিন দিন এর প্রসারতা বাড়ছে।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হামিদুর রহমান
ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট
ইসলামিক ব্যাংকিং ডিভিশন
ব্যাংক এশিয়া