প্রযুক্তি পণ্য যেন ঘাতক না হয়

আধুনিক বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নত পরশ পেয়ে সভ্যতা হয়ে উঠেছে উন্নত থেকে উন্নতর। যোগাযোগব্যবস্থা চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোই। ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন প্রভৃতির মাধ্যমে জীবনব্যবস্থায় ঘটেছে এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য মাধ্যম মোবাইল ফোন, যার মূল্যটা সবার সাধ্যের মধ্যেই থাকে। ইন্টারনেট ব্রাউজিং, চ্যাটিং, অডিও, ভিডিও, গেমিংসহ প্রায় সকল প্রকার সুবিধার কারণে মোবাইল ফোন তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে উঠেছে অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আধুনিকতার চাদরে আবৃত বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে এক প্রকার বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোবাইল নামক যন্ত্র, এই যন্ত্রের অপব্যবহারে সন্তানরা ধ্বংস করে ফেলছে নিজেদের নৈতিকতা এবং পতিত হচ্ছে প্রতারণার ফাঁদে। তেমনই এক ফাঁদ হলো প্রেম নামক প্রতারণা।

প্রযুক্তির সহজলভ্যতাকে ব্যবহার করে অপরাধের নাব্য নতুন রূপ দিচ্ছে প্রতারক চক্র। বর্তমানে এদের প্রধান হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। প্রতিনিয়ত নানা কলা-কৌশলে নারীরা পুরুষকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করছে। আবার পুরুষরাও নারীদের ফাঁদে ফেলছে। এই প্রতারণার কবলে পড়ে আবেগপ্রবণ ছেলেমেয়েরা হারিয়ে ফেলছে তাদের চেতনা। সাময়িক সময়ের জন্য ভুলে যাচ্ছে জীবনের সকল উদ্দেশ্য, বিলিয়ে দিচ্ছে নিজের সর্বস্ব।

প্রেম-ভালোবাসায় দুর্বল হয়ে আবেগতাড়িত কিশোর-কিশোরী লিপ্ত হয়ে পড়েছে প্রেমিক-প্রেমিকার সকল চাওয়া পূরণ করতে। বাস্তবতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের গোপন ও অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো শেয়ার করছে প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে। নিজের স্বার্থ পূরণ না হলে সেই ছবি ব্যবহার করেই ব্ল্যাকমেইল করছে প্রেমিক-প্রেমিকা নামক সেই প্রতারক চক্র। চেয়ে বসছে একের পর এক টাকার আবদার। এভাবেই প্রকাশিত হচ্ছে এক সময়ের হƒদয়ের দাবিদার ঘাতক রূপে। অতি আপনজন থেকে পরিণত হচ্ছে ভয়ংকর এক স্বার্থান্বেষী ঘাতকরূপে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালে তরুণ-তরুণীরা প্রেম নামক প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে। আর এই ফাঁদে পতিত হয়ে তরুণ প্রজন্মকে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হতে হচ্ছে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্ল্যাকমেইলের হুমকি আজকাল অহরহ ঘটছে। এই ধরনের অপরাধ সাইবার অপরাধ নামে পরিচিত এবং বেশিরভাগ শিকার হচ্ছে নারীরা। যার ফলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছে।

তরুণ বয়সে যেখানে আত্মবিশ্বাস, সুচিন্তা, নৈতিকতা, পরিশীল ও গবেষণামূলক মনমানসিকতা গড়ে তোলা দরকার, সেখানে এমন প্রতারণার ফাঁদে পতিত হয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। যুবসমাজ, পড়াশোনা ও সুন্দর ক্যারিয়ার থেকে বিচ্যুত হয়ে জড়িয়ে পড়ছে মাদকসেবীদের দলে ও বিকৃত রুচির চর্চায়। সামাজিক লাজলজ্জা পরিহার করে তরুণ-তরুণীরা অবাধ মেলামেশার উগ্র আধুনিকতায় মিশে দূষিত করে তুলেছে এই সুশীল সমাজটাকে।

চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এসবের কারণে তরুণরা শারীরিক ও মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, একপর্যায়ে অতি আক্রমণাত্মক, বদমেজাজি ও খিটখিটে করে তোলে। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন, শিক্ষকদের সঙ্গে তৈরি হয় দূরত্ব, হতাশায় ডুবে গিয়ে মেধাশূন্য হয়ে পড়ে, তারুণ্যসম্পদ একপর্যায়ে হয়ে ওঠে হুমকি স্বরূপ।

এই ভয়ংকর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই ফাঁদের নেতিবাচক প্রভাবগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতারণা থেকে দূরে থাকার জন্য পরিবারের সচেতনতা তৈরি করতে হবে, তথ্যপ্রযুক্তি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং আধুনিকতার নামে প্রযুক্তির অপব্যবহার না করে, ধর্মীয় দিকগুলোর প্রতি আগ্রহ বাড়াতে পারলেই মিলবে মুক্তি।

ইদুল হাসান

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়