শেয়ার বিজ ডেস্ক: ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য সম্প্রসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়ার পর দেশটি নতুন বাণিজ্যিক অংশীদার খোঁজার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মাংস আমদানি বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক বাণিজ্যিক আলোচনা সেরে ফেলেছে দেশটি। যুক্তরাজ্যের নজর এখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক জোট সিপিটিপিপি। যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে এই ট্রান্স প্যাসিফিক ট্রেড পার্টনারশিপে যোগ দিতে আলোচনা শুরু করেছে। খবর: গার্ডিয়ান, জাপানটাইমস।
গতকাল বুধবার সকালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১১ জাতির নেতাদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে যুক্তরাজ্যকে এ বাণিজ্যিক জোটে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। জাপানের অর্থমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরাকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে জাপানের অর্থমন্ত্রী ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিজ ট্রাস প্রাথমিক আলোচনা করেছেন।
জাপানের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এ জোটে যোগ দিলে ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা আরও বাড়বে। আর যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, জোটে সদস্য হওয়া যুক্তরাজ্যের জন্য বিশাল এক সুযোগ। তিনি বলেন, এটা আমাদেরকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির খুব কাছে নিয়ে যাবে।
গতকাল প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাণিজ্যিক জোট কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপের মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকের পর (সিপিটিপিপি) জাপানের অর্থমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা সাংবাদিকদের বলেছেন, এ জোটে যুক্তরাজ্য যোগ দিলে যুক্তরাজ্য ও জাপানের অর্থনৈতিক বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি এ জোটটির অর্থনীতি আকারের দিক দিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমান হবে।
এদিকে বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে মন্ত্রীরা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সিপিটিপিপি যুক্ত হলে বিশ্বব্যাপী আমাদের বাণিজ্যিক অংশীদার বৃদ্ধি পাবে।
প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রুনাই, কানাডা, চিলি, জাপান, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, পেরু, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামÑএ ১১টি দেশ নিয়ে ২০১৮ সালে প্রশান্ত মহাসাগরীয় (আঞ্চলিক) বাণিজ্যিক জোট সিপিটিপিপি বা টিপিপি গঠিত হয়। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের এই জোটে মধ্যস্থতা থেকে প্রত্যাহার করে নেন। এর পরের বছর এ জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়াতে ব্রিটেন টিপিপিতে যোগ দেয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়ে বলেছিল, তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উদীয়মান অর্থনীতির সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক স্থাপনে আশাবাদী। ওই সময় এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, এই অঞ্চলের সদস্য হওয়ার মানে হলো গাড়ি উৎপাদন শিল্পে আরও কম ট্যারিফের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়ানো এবং ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
এদিকে গতকাল এক টুইট বার্তায় যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিজ ট্রাস বলেন, সিপিটিপিপি জোটে সদস্য হওয়া যুক্তরাজ্যের জন্য বিশাল এক সুযোগ। তিনি বলেন, এটা আমাদেরকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির খুব কাছে নিয়ে যাবে এবং যুক্তরাজ্যে ব্যাপক কর্মস্থান বাড়বে।
এরই মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ জার্মানিকে হটিয়ে চীন যুক্তরাজ্যের বাজার দখল করে নিয়েছে। এখন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় আমদানি বাজার হলো চীন। আর টিপিপিতে যোগ দিলে যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন পণ্যে ট্যারিফ সুবিধা পাওয়া যাবে। কারণ নিয়ম অনুযায়ী, সদস্য দেশগুলোর মধ্যে কম শুল্কে ও স্বল্প ট্যারিফে পণ্য সরবরাহ করা হয়। জোটটি এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশ ট্যারিফ সরিয়ে নিয়েছে সদস্য দেশগুলোর বাণিজ্যে। এ জন্যই মূলত যুক্তরাজ্য এ জোটে ভিড়তে চাইছে। ফলে এশিয়ায় যুক্তরাজ্যের রপ্তানি বাণিজ্য দ্রুত বাড়বে।