খালিদ ফেরদৌস: বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ম্যাচে সাকিব আল হাসান একটা ফিল্ডিং মিস করার পর ধারাভাষ্যকার বললেন, ইধংরপধষষু ঝযধশরন রং যঁসধহ. সাধারণত ফুটবলে মেসি বা রোনালদো ভুল করলে ধারাভাষ্যকাররা তাদের এমনভাবে বলেন। এই উক্তি থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, সাকিব এই বিশ্বকাপে অতিমানবীয় পারফরম্যান্স প্রদর্শন করছেন।
যাহোক, আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯-এ বাংলাদেশ বিশেষ করে সাকিব অবিশ্বাস্য রকমের ভালো খেলার কারণে দেশে এখন ক্রিকেট উন্মাদনা চরমে। সারা দেশ এখন ক্রিকেটজ্বরে ভুগছে। কিন্তু আইসিসির এই ইভেন্ট পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছু কদর্যচিত্র ক্রিকেটপ্রেমীদের দারুণভাবে মর্মাহত করছে। আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত এই মর্মবেদনা আরও প্রকট করেছে, যা কারও প্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের ম্যাচে লিটন দাসের বিতর্কিত ক্যাচ আউটসহ কয়েকটা সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গেছে। তাছাড়া আইসিসি যখন ভারতের ব্যাপারে নতজানু আচরণ করে, তখন তাদের ওপর সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের আস্থা ও বিশ্বাস তাৎপর্যজনকভাবে লোপ পায়। এর আগে ভারতের পক্ষে বিভিন্ন নতজানু সিদ্ধান্ত নিয়ে আইসিসি বেশ কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে বেশ কয়েকটা ভারতের পক্ষে যায় এমন সিদ্ধান্ত দিয়ে বাংলাদেশসহ ক্রিকেট দর্শক ও বোদ্ধাদের চক্ষুশূল হয়েছে আইসিসি।
নিঃসন্দেহে বলা যায়, বিশ্ব ক্রিকেটে ভারত একটা উজ্জ্বল নাম। তারা জš§ দিয়েছে চেতন শর্মা, কপিল দেব, অনিল কুমলে, শচীন টেন্ডুলকার, বর্তমান বিশ্ব মাতানো বিরাট কোহলির মতো লিজেন্ড খেলোয়াড়; সম্মোহনী ক্ষমতার অধিকারী অধিনায়ক মাহেন্দ্র সিং ধোনি। ক্রিকেট পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের অবদানের শেষ নেই। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের বহুজাতিক ক্রিকেট ইভেন্টের ৮০ শতাংশ অর্থ আয় আসে ভারতীয় বিভিন্ন করপোরেশন হাউজের স্পন্সরশিপ থেকে।
তাই বলে তারা আইসিসির নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবে?
বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আসর আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে গত ৩০ মে। অথচ সপ্তম দিনের আগে ভারতের কোনো ম্যাচ ছিল না! বিশ্বকাপে ভারত তাদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামে ৫ জুন। তার আগে অধিকাংশ দলই দুটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। সেই তালিকায় আছে আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। ভারত যেদিন প্রথম ম্যাচ খেলে সেদিন বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচ খেলে। বাংলাদেশের কথা বাদই দিলাম। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে মোড়লদের একটু অ্যালার্জি আছে। খুব ভালো খেললেও স্বীকৃতি দিতে কুণ্ঠাবোধ করে। যেমন ২ জুনের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশ অসাধারণ খেলে জেতার পরও ভারতীয় মিডিয়া এটাকে আপসেট হিসেবে প্রচার করেছে। নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ম্যাককুলাম তো বিশ্বকাপ শুরুর আগে জ্যোতিষী সেজে ঘোষণা দিয়েই দিয়েছিল, বাংলাদেশ শুধু শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জিতবে, বাকি আট ম্যাচে হারবে। এগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে নাক সিটকানো মনোভাবের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যদিকে ক্রিকেটে যাদের অভিজাত ও মোড়ল শ্রেণি বলে ধরা হয় তারাও ভারতের কাছে ধরাশায়ী। কারণ ভারত প্রথম ম্যাচ খেলার আগে নিজের দেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন করেও ইংল্যান্ড দুই ম্যাচ খেলে ফেলে।
আর যেদিন ভারতের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের তৃতীয় ম্যাচ খেলে সেটা ছিল ভারতের প্রথম ম্যাচ! ৬ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলে। সূচি অনুযায়ী ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলার কথা ছিল ভারতের।
কিন্তু তাদের খেলোয়াড়দের আঁটসাঁট সূচির ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলার ধকল কাটিয়ে উঠতে বিশ্বকাপের আগে কমপক্ষে দুই সপ্তাহের বিশ্রাম চেয়েছিল দ্য বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। বিশ্রামের পাশাপাশি তাদের এই অন্যায্য দাবির পেছনে অর্থেরও একটা যোগসূত্র আছে। এই সময়টাতে যাতে ভারতীয় ক্রিকেটাররা চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
আর সেটা করতেই ২ জুনের ম্যাচটি ৫ জুন স্থানান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
আইসিসির কাছ থেকে ভারত বাড়তি সুবিধা পেয়েছে, তা অকপটে স্বীকার করেছে অধিনায়ক বিরাট কোহলি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপের সূচি ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। আমার তো মনে হয়, এটা আমার কাছে বাড়তি সুবিধা।
একবার ভাবুন তো এই অনুরোধ বাংলাদেশ বা আফগানিস্তানের মতো দেশ যদি আইসিসির কাছে করত তাহলে ফলাফল কী দাঁড়াত? দ্বিধাহীনভাবে উল্লেখ করা যায়, ভারতকে অতিরিক্ত সুবিধা করে দিতে গিয়ে অন্য দলগুলোর প্রতি অবিচার করছে আইসিসি।
ভারত আইসিসির বিধিমালা মেলে চলার ক্ষেত্রেও অনীহা প্রকাশ করে বিভিন্ন সময়। এবারের বিশ্বকাপে মাহেন্দ্র সিং ধোনি তাদের টেরিটোরিয়াল সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে তার গ্লাভসে বাহিনীর প্রতীক ব্যবহার করছে। এ জন্য আইসিসি তা ব্যবহার করতে নিষেধ করে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ধোনির পক্ষ নিয়ে বলেছে, বিশ্বকাপে আইসিসির আদেশ মানতে বাধ্য নয় ভারত। সত্যি বলতে কী, আইসিসির মতো একটা বিশ্বক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার কথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এভাবে নিতে পারে না। এগুলো বন্ধ হওয়া ক্রিকেটীয় স্বার্থেই বড় প্রয়োজন।
আর্থিক লাভের কাছে সবাই নিজেদের সঁপে দিলে ক্রিকেট আগাবে কীভাবে? এটা কারও কাম্য নয়। সব ক্রিকেট ভক্তরা মনে-প্রাণে চান ক্রিকেট বীরদর্পে এগিয়ে যাক, গুটিকয়েক দেশের স্বার্থে জলাঞ্জলি না দিয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক।
অবশ্য ভারত আইসিসিকে ব্যবহার করে সুবিধামতো সূচি করে, বিশ্বকাপের ফেভারিট দল হিসেবে খেললেই সব ম্যাচ জিতে যাবে এমন নয়। তবে তাদের প্রথম ম্যাচের দিন অপর একটি দলের তৃতীয় ম্যাচ খেলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এটা কি ফুটবল বিশ্বকাপ, অলিম্পিক কিংবা অন্য কোনো বড় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় সম্ভব হতো? হয়তো হতো না বা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। তাহলে কেন ক্রিকেটেই কেবল এটা সম্ভব? দামি প্রশ্নের মতো দামি উত্তর কমবেশি সবার জানা। ভারত ক্রিকেটের বিশাল বাজার ও অর্থের উৎস। সে যা-ই হোক প্রথাগতভাবে আইন, বিচার, বিচারক তো আর ধনী-গরিব, অর্থ-বিত্ত দেখে বিচার করে না। তাহলে আইসিসি কেন অর্থের কাছে অসহায় হয়ে বিদ্যমান নিয়ম-নীতির ব্যত্যয় ঘটাবে? এই প্রশ্নের সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস। সূচি পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে তিনি আইসিসি ও ভারতকে ধুয়ে দেওয়ার সঙ্গে এও বলেছেন, এটা আইসিসির দ্বৈতনীতির বহিঃপ্রকাশ। ভারত যখন মাঠে নামে তখন বিশ্বকাপের আটটি ম্যাচ হয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে ভারত ভালোভাবেই অন্য দলগুলো, পিচ ও কন্ডিশন সম্পর্কে ভালো ধারণা পেয়ে গেছে বলে মনে করেন ক্যালিস। বিশ্বকাপের সময় ভারতকে এমন অযাচিত সুবিধা দেওয়াটা ক্রিকেটবোদ্ধা ও সাধারণ দর্শকদের কাছে চরম দৃষ্টিকটু হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্বকাপের ছয়দিন পর ভারত কেন প্রথম ম্যাচ খেলতে মাঠে নামল এমন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন এখন অনেকের কাছে। যার উত্তরও অনেকের কাছে স্পষ্ট। তাদের বদ্ধমূল ধারণা, এই অনিয়মের পরও ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা ও আইপিএলে বড় অফারের কথা মাথায় রেখে আইসিসি কর্তাব্যক্তি, আম্পায়ার বা টেকনিক্যাল কমিটির লোক দৃশ্যত কোনো কথা বলছে না। এমনকি বর্তমান বিভিন্ন দেশের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটারদেরও মুখে কুলুপ একই কারণে। যারা ক্রিকেটের প্রসার নিয়ে ভাবে তাদের বড় অংশের অভিমত, ভারত ক্রিকেটের বিশ্বায়নের অন্যতম বিরোধী।
তাদের নিজ দেশের খেলোয়াড় যারা আইপিএল খেলে তাদের অন্য দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে দেয় না। তারা চাই আইপিএল হয়ে থাক বিশ্বের একমাত্র লিগ; যেটা হবে অন্যদের থেকে প্রভাব-প্রতিপত্তি ও অর্থ-বিত্তে সম্পূর্ণ আলাদা। তাদের সেই আশা ইতোমধ্যে পূরণও হয়েছে সিংহভাগ। আইপিএল এখন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থলগ্নিকারী টুর্নামেন্ট। বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা লগ্নি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আইপিএলে অর্থ বিনিয়োগ করতে। এই সুযোগ ও সম্ভাবনা অবারিত ও বাধাহীন রাখতে অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর ব্যাপারে বিসিসিআই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। তারা মোটেও চাই না ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ ও বহুজাতিক ক্রিকেট ইভেন্টগুলোতে অন্য দেশ প্রভাব বিস্তার করুক।
তারা এও চাই না এই বাজারে নতুন করে চীন-জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা আসুক। তাদের ধারণা, তারা এলে বিশেষ করে চীন ক্রিকেটবিশ্বে ঢুকলে তাদের বাজারে বড় ধরনের ভাগ বসাবে।
ভারতের বাইরে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও আইসিসির দ্বিমুখী নীতির প্রতিফলন ক্রিকেট দর্শকরা প্রত্যক্ষ করে। উদাহরণস্বরূপ চলমান বিশ্বকাপের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের কথা বলা যায়। এই ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছিল আম্পায়াররা অস্ট্রেলিয়াকে জেতাতেই মাঠে নেমেছে। আম্পায়ারদের দেওয়া পাঁচটি সিদ্ধান্ত ডিসিশন রিভিউ সিস্টেমে (ডিআরএস) গড়ায়। যেখানে ক্রিস গেইল ও জেসন হোল্ডারের বিরুদ্ধে নেওয়া চারটি সিদ্ধান্ত আম্পায়ারদের বিপক্ষে যায় অর্থাৎ সিদ্ধান্ত বাতিল করে নট আউট ঘোষণা করে থার্ড আম্পায়ার। একটা সিদ্ধান্তে ক্রিস গেইল আউট হলেও সেটা নিশ্চিতভাবে শুধু আম্পায়ারস কলের কারণে আউট হয়েছে সে। এখানে আম্পায়ার আউট না দিলে অস্ট্রেলিয়া ডিআরএসের সহায়তা নিলেও গেইল আউট হতো না। ক্রিস গেইলের আউট নিয়ে দেশের একটা জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক শিরোনাম করেছে তিনবারের চেষ্টায় আম্পায়াররা আউট করল গেইলকে, এই ম্যাচে যেখানে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত বারবার থার্ড আম্পায়ারের কাছে বাতিল হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কী দরকার। এমন আম্পায়ারিংয়ের কারণে এখানে সবাই পক্ষপাতিত্বের গন্ধ খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক। অনেক ক্রিকেটপ্রেমী ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে তোলার সব পরিকল্পনা করে রেখেছে আইসিসি।
কোনো সন্দেহ নেইÑএটা ক্রিকেটের ঐতিহ্য, সুনাম ও সৌন্দর্যকে নষ্ট করছে। তাছাড়া ক্রিকেট যে একটা ভদ্রলোকের খেলা তা মেনে নিতে মানুষের কষ্ট হয়। এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পরও দোষী আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। ক্রিকেটের বিশ্বায়ন বিরোধী নানা কর্মকাণ্ডের পরও কার্যত অভিযুক্ত দেশগুলোর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ নেই। এভাবে চলতে থাকলে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকার পরও ক্রিকেট খেলাটি বিশ্বায়ন ও প্রচার-প্রসারের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে। এই খেলা সীমাবদ্ধ থাকবে দশ-পনেরোটা দেশের মধ্যে। যেখানে পৃষ্ঠপোষকতার দোহায় দিয়ে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মতো দেশকে ম্যানেজ করে ভারতীয় একচ্ছত্র প্রভাব চলতেই থাকবে। আমরা একান্তভাবে চাই, এই প্রভাববৃত্ত থেকে আইসিসি বেরিয়ে আসবে। চলমান বিশ্বকাপে দ্বিমুখী নীতি পরিহার করবে এবং আম্পায়ারিং আরও উচ্চমার্গীয় হবেÑএমন প্রত্যাশা সব ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকের।
ক্রিকেটের নতুন বিস্ময় বাংলাদেশ অন্য যে কোনো খেলার চেয়ে ক্রিকেটে অমিয় সম্ভাবনাময়। এখানে বাংলাদেশের ক্ষমতা আছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার। ক্রিকেটের বিশ্বায়নের মাধ্যমে খেলাটি যদি অলিম্পিকসহ বড় বড় বৈশ্বিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত হয় এবং বাংলাদেশ একদিন অলিম্পিক ক্রিকেটে স্বর্ণপদক বয়ে আনলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তাই বিসিবির উচিত হবে ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে কূটনীতিক তৎপরতা চালিয়ে আইসিসি ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের যোগসাজশে নানা অনিয়ম বন্ধ করা। ক্রিকেটকে তার নিজস্ব কক্ষপথে ফিরিয়ে আনা।
ক্রিকেটের বিশ্বায়নের স্বার্থে ভারতের আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা থেকে সরে আসতে হবে। আইসিসিকে সবসময় বিদ্যমান নিয়ম-কানুনের আলোকে চলার জন্য চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে কুলীন বিবেচনা করলে চলবে না। নামিবিয়ার জন্য যে নিয়ম, ভারতের জন্য একই নিয়ম হতে হবে। আইসিসিকে ভুলে গেলে চলবে না, তাদের অযোক্তিক সিদ্ধান্তের কারণে একসময়কার অত্যন্ত উদীয়মান দল কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়ার অবস্থা খারাপের দিকে। ইউরোপে ক্রিকেট খেলা সর্বপ্রাচীন হলেও সেখানে এর প্রসার সবচেয়ে ধীরগতিতে।
তাই এখনই উপযুক্ত সময় সব অনিয়ম ও কুলীন প্রথা রোধ করে ক্রিকেটকে তার নিজের গতিতে চলতে দেওয়ার। যাতে ক্রমবিকাশমান জনপ্রিয় এই খেলাটি সব দেশে ছড়িয়ে পড়বে। উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে খুব দ্রুত ক্রিকেট অলিম্পিকসহ বড় বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় স্থান করে নেবে। আমাদের মতো দেশ যারা অন্যান্য খেলায় উন্নত দেশের তুলনায় পিছিয়ে তারা অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারবে। আশা করি, আইসিসির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে খুব দ্রুত ক্রিকেট তার সব বাধা ডিঙিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। ক্রিকেটে উন্নতির গ্রাফে তরতর করে উপরে ওঠা বাংলাদেশসহ উদীয়মান সব ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের মানুষের এই প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশি। প্রত্যাশার প্রাপ্তি যেন ঘটে।
এমফিল গবেষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়