প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতির সংকীর্ণ লক্ষ্যমাত্রার কারণে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। এতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে এবং এ খাতের উদ্যোক্তারা আরও বেশি মুনাফাভোগী হবে। এটি জনগণের ওপর নতুন করে আর্থিক চাপ বাড়াবে। গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানিয়েছে উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন)।
এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী বলেন, আমাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে সবসময় সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যায়। এর ফলে এ খাতের সফলতা অধরা থেকে যাচ্ছে এবং ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। কারণ বিগত সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় এ ধরনের কাজ করায় বাংলাদেশ ক্রমেই জ্বালানি আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।
হাসান মেহেদী বলেন, সরকার একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা প্রণয়নে চার বছরের অধিক সময় নিয়েছে। তবে বর্তমানে কোনো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা নেই। ফলে পরবর্তী সময়ে এই নীতিমালা সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া খসড়া নীতিমালা প্রণয়নে নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য যথেষ্ট সময় দেয়া হয়নি।
তিনি আরও বলেন, খসড়া নীতিমালাটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য কমানো হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ছয় হাজার ১৪৫ মেগাওয়াট (২০ শতাংশ) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ১৭ হাজার ৪৭০ মেগাওয়াট (৩০ শতাংশ) নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ে পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন কৌশল বা অর্থায়ন ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেই। ফলে এ নীতি বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি করবে।
এদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কোম্পানিগুলো ১০ বছর সম্পূর্ণ এবং পাঁচ বছর আংশিক কর অব্যাহতি পেলেও সাধারণ নাগরিকরা কোনো কর সুবিধা বা প্রণোদনা পাচ্ছে না। অন্যদিকে অন্যান্য দেশে ছাদ সৌর প্যানেল স্থাপনে সরাসরি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়, কিন্তু প্রস্তাবিত নীতিমালায় এমন কোনো সুবিধা রাখা হয়নি।
সরকারের এ দায়সারা খসড়া ও ভিন্ন ভিন্ন পলিসিতে ভিন্ন ভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি পরিকল্পনা থাকায় বিনিয়গকারীরা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া নীতিমালাটি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উপেক্ষা করেছে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জ্বালানি লক্ষ্য অর্জনে দেশীয় অর্থায়নের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি।
আগামী ২০ বছর জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানিতে যে অর্থ ব্যয় হবে, তা দিয়ে এর চেয়ে ১০ গুণ সক্ষমতার নবায়নযোগ্য জ্বালানি স্থাপন করা সম্ভব। এজন্য সরকারের তরফ থেকে শুধু বাস্তবসম্মত নীতি সহায়তা প্রয়োজন। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পগুলো যে সহায়তা পাচ্ছে, সেই সহায়তা পেলে বেসরকারি বিনিয়োগেই এ খাত এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি দ্রুত সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া উচিত। পাশাপাশি সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি প্রণয়নের প্রতি জোর দেয়া উচিত।