Print Date & Time : 4 August 2025 Monday 2:11 am

প্রাতিষ্ঠানিকদের কৌশল বুঝে সাইড লাইনে সাধারণ বিনিয়োগকারী

শেখ আবু তালেব: চীনা কনসোর্টিয়াম এখন পুঁজিবাজারের কৌশলগত অংশীদার। অন্যদিকে রমজান ও বাজেট প্রস্তুতের এই সময়ে অতীতের ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজার একটু মন্দাই থাকে। কিন্তু এবারের পতন অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আরও কম দরে কিনতে নতুন করে শেয়ার কিনছে না। ফলে শেয়ারদর কমেই চলছে। তাদের এই কৌশল বুঝতে পেরে সাইডলাইনে চলে গেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এর প্রভাবে লেনদেন কমার পাশাপাশি আয় কমছে বাজার পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর।
ফলে শিগগিরই যে বাজারে গতি ফিরবে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অধিকাংশ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীরা। গত সপ্তাহ শেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে সব ক্যাটেগরির শেয়ার লেনদেন কমেছে। আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে শেয়ারের লেনদেন কমেছে ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। টাকার পরিমাণে যা ৬৬৫ কোটি টাকার বেশি। একই সময়ে বাজার মূলধন কমেছে দুই দশমিক ৭৩ শতাংশ বা সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
একটানা বাজার পতনের কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষ পর্যায়ের এক ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, চীনা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের সংবাদে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলেই সবার বিশ্বাস ছিল। এজন্য ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকার বিনিয়োগ করতে পারবে, এমন সক্ষমতার বিনিয়োগকারীরাও নিয়মিত খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হঠাৎ করেই শেয়ার ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছে। এতে শেয়ার ক্রেতা কমে যাওয়ায় বাজার পতনের দিকে যেতে শুরু করছে। ফলে বাজারে কারসাজি হতে পারে ধরে নিয়ে ওইসব বিনিয়োগকারী এখন সতর্ক অবস্থানে চলে গেছেন। সাইডলাইনে বসে দেখছেন বাজার কোন দিকে মোড় নেয়। শিগগিরই যে তারা বাজারে ফিরবেন তারও কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের এমন নিষ্ক্রিয়তার সংবাদ ধীরে ধীরে চলে গেছে সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের কাছে। ফলে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি কমে গেছে উপস্থিতি। ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত অধিকাংশ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। এ সময় একাধিক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, বাজারে স্বল্প মূলধনি একটি কোম্পানির শেয়ারদর বর্তমানে দেড় হাজার টাকার কাছাকাছি। শেয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় সহজে এই শেয়ার কিনতে পাওয়া যায় না। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বস্ত্র খাতের কোম্পানিটির ৫৩টি শেয়ার বিক্রির প্রস্তাবনা থাকলেও কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
কারণ হিসেবে তারা জানান, মন্দা বাজার সাধারণত নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্র ধরা হয়। কিন্তু এবারের মন্দা বাজারের পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাত থাকতে পারে বলে বাজারে খবর প্রচার হচ্ছে। এ জন্য নতুন করে কেউ শেয়ার কিনতে চাচ্ছেন না। লোকসান যাতে আরও বেশি না হয়, সে জন্য এখনই শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে অধিকাংশই।
বাজারে যে সহসাই গতি ফেরার সম্ভাবনা কম, তা অর্থমন্ত্রীর কথায়ও তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ শীর্ষক এক সম্মেলনে গত ১৭ মে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী বাজেটের (২০১৮-১৯ অর্থবছর) পরই পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য বৈঠক করা হবে। বিনিয়োগকারীদের মতে, চলতি ও আগামী মাস বাজেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন তিনি। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রীর এমন ঘোষণায় বাজার আরও পতনের দিকে যেতে পারে।
তবে অর্থমন্ত্রীর কথায় বাজার আরও দুই মাস মন্দা থাকতে পারে বিনিয়োগকারীদের এমন শঙ্কার সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ। এ বিষয়ে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, এজন্য সময় দিতে পারছেন না। বাজেটের পর দেখা যাক সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদ্যোগ যাই হোক, বাজারকে আস্থায় ফেরাতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে অবশ্যই কিছু পরিবর্তন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন এই বিশ্লেষক।