Print Date & Time : 30 July 2025 Wednesday 1:40 am

প্রাতিষ্ঠানিক আইন অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকমে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জবরদস্তি করে দখল নয়, দাপ্তরিক কাগজপত্রের সুরক্ষা এবং ভবনের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলেই গ্রামীণ টেলিকমে তালা দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকালে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল মজিদ বলেন, ‘যাদের হাতে প্রতিষ্ঠানের আইন সৃষ্টি, তারাই একটি আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে জবরদখলের মতো শব্দ ব্যবহার করে নোবেলবিজয়ী এ প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চাইছে। তারা বিষয়টি আদালত পর্যন্ত নেয়ারও হুমকি দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক পরিবারের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রেখে আন্তরিকভাবে বিষয়গুলো সমাধান করা আমাদের লক্ষ্য। আজ যারা গ্রামীণ ব্যাংকের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যুক্ত, তারাও গ্রামের দরিদ্র ও ভূমিহীন সদস্যদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আন্তরিক। আমরা গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটি পাঁচ লাখ দরিদ্র ও ভূমিহীন ঋণগ্রহীতা সদস্যদের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’

গ্রামীণ টেলিকম ভবনে থাকা গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ফান্ড, গ্রামীণ মৎস্য ফাউন্ডেশন, গ্রামীণ

উদ্যোগ, গ্রামীণ সামগ্রী ও গ্রামীণ শক্তি নামে সাতটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভার অনুমোদনে এবং গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান ড. একেএম সাইফুল মজিদ।

তিনি বলেন, ‘ওই সাতটি প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের সৃষ্টি। আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও নির্দিষ্ট সংখ্যক পরিচালক মনোনয়নে গ্রামীণ ব্যাংক আইনগত অধিকার রাখে।’

এ সময় গ্রামীণ ব্যাংকের অনেক টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান। প্রাতিষ্ঠানিক আইন অনুযায়ী ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকসহ বাকি সাত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণ টেলিকমের অ্যাডভাইজার জিএম জুবায়ের, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার মাসুদ আক্তার, গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালক জাকারিয়া রহমান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে এক কোটি পাঁচ লাখ দরিদ্র ভূমিহীন ঋণগ্রহীতা গ্রামীণ ব্যাংক তথা গ্রামীণ পরিবারের সদস্য। তাদের উন্নয়নই গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে যেকোনো ধরনের সমালোচনা দুঃখজনক। এর অবসানের লক্ষ্যে আমরা প্রথমবারের মতো একটি কম্প্রিহেনসিভ অডিট করেছি। অডিটের যে ফল এসেছে, তাতে এটা পরিষ্কারÑএই এক কোটি পাঁচ লাখ সদস্যের অর্থ ও অধিকার ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব।

গ্রামীণ ব্যাংকের আইন-বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাসুদ আক্তার বলেন, ‘ভবনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই প্রতিষ্ঠানগুলোয় তালা দেয়া হয়েছে।’

গত বৃহস্পতিবার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করেন, কোনো ধরনের এখতিয়ার বা সম্পর্ক না থাকলেও গ্রামীণ ব্যাংকের লোকজন গ্রামীণ টেলিকম ভবনে আটটি প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে জবরদখল করছে।

তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের তার নিজস্ব সংঘবিধি আছে। আইনকানুন রয়েছে। সেসব তো পালিয়ে যায়নি। আইন-সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে যদি কারও কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আইন-আদালত আছে। সেখানে পরিষ্কার হবে। কিন্তু জবরদখল কেন? এখানে যদি জালিয়াতির বিষয় থাকে তাহলে নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে আদালতে।

ড. ইউনূস বলেন, কেউ যদি আমার ঘরে তালা দিয়ে যায়, সেটা তো ঠিক নয়। আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে অনেক মামলা হয়েছে। আরেকটা না হয় হতো, অসুবিধা কী? এগুলো নিয়েই আছি সব সময়।

আপনার আয়ের উৎস কী, কীভাবে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেনÑএসব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ব্যবসার মাধ্যমে অর্জন করে করেছি। এটা গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় করিনি। একটা টাকাও গ্রামীণ ব্যাংকের নেই।

ড. ইউনূস বলেন, তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ নেই, তাদের একটি টাকাও এখানে নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের যেসব দাবি-দাওয়া সেগুলো এখানে নেই। আমাদের আইনবিধি পরিষ্কার। আইন মেনে-বুঝে সবকিছু করা হয়েছে। এমন একটা জটিল পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ করতে হয়, আইন ভঙ্গ করলে আমাদের বিপদের চাইতে মহাবিপদের মধ্যে পড়তে হয়। সেজন্য আমরা সবকিছু আইন মেনেই করেছি। এখন যদি তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য থেকে থাকে, সেটা তাদের ব্যাপার।