প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ডে ট্রেডিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে

শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’। প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় অনুষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজার বিনিয়োগের অন্যতম স্থান। এখানে মধ্যমমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এ ধরনের বিনিয়োগ বাজারের ভিত্তি মজবুত করে। এতে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হন। কিন্তু বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী প্রতিদিনের কেনাবেচায় বিশ্বাসী। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ট্রেডিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে বাজার শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারছে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচে এ বিষয়ে আলোকপাত করেন বাজার বিশ্লেষকরা। খুজিস্তা নূর-ই-নাহরীনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও অধ্যাপক  মোহাম্মদ মূসা।

ড. হেলাল বলেন, স্বাভাবিক মার্কেটে ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার কিনবে। ব্যাংকিং খাতের উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংকেরও যদি একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ে তখনই বাজারে অসঙ্গতি দেখা দেয়। গত কিছুদিন ধরে দেখা যায় সূচক একই জায়গায় আছে, কিন্তু কিছু আইটেম উঠছে কিছু নামছে। বাংলাদেশের জন্য মুশকিল হচ্ছে আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী ডে ট্রেডার। কেবল সাধারণ বিনিয়োগকারীই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এ ভূমিকায় নেমেছে। আমাদের দেশে সবাই অল্প সময়েই অল্প লাভে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে, তাদের দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা কাজ করে না।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এখন ডে ট্রেডারের ভূমিকা কেন পালন করছে এই প্রশ্নে ড. হেলাল বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এই ভূমিকা পালনের কারণ হচ্ছে- শেয়ার মার্কেটে দুটো রিক্স। একটি হচ্ছে আইটেম স্পেসিফিক রিক্স, অন্যটি হচ্ছে কমন রিক্স বা মার্কেট রিক্স। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হয়তো ঝুঁকি কমাতে এটি করছেন।

বর্তমান বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, একই সঙ্গে সব ধরণের শেয়ারের দর বাড়া আবার একই সাথে সব ধরনের শেয়ারের দর পতন সুস্থ মার্কেটের লক্ষণ নয়। তার প্রশ্ন সব আইটেম কেন একসঙ্গে বাড়বে এবং কমবে? এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেটা তখনই হয় যখন দেশে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ এর সময় সব ধরনের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে সেদেশের পুঁজিবাজারে বিপর্যয় নেমে আসে।

ড. মূসা বলেন, আমাদের বাজার দক্ষ বাজার না। ইকোনমিক তথ্য না থাকলে যদি বাজার একই সঙ্গে বাড়ে এবং কমে তবে সেটা অসুস্থতার লক্ষণ এবং সেই বাজার অদক্ষ। তিনি বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই হচ্ছে ব্যক্তি বিনিয়োগকারী। তার মতে,  এ ধরনের বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির মৌল ভিত্তি দেখার মতো যোগ্যতা নেই। কোনো কোম্পানির শেয়ার একটু বাড়লেই তারা সেই লাভের আশায় মগ্ন থাকে। তিনি বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এখন ডে ট্রেডারের মতো হয়ে গেছে। তারা গ্যাম্বলারদের সঙ্গে থেকে লাভ করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, এখনও পুঁজিবাজারের কয়েকটি খাতের শেয়ারের দর কম। এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে মুনাফা আসবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পিই রেশিও কম এবং শেষ পাঁচ বছরের আয় স্বাভাবিক এ রকম শেয়ারে মুনাফা আসবেই। তাই পিই রেশিও কম ও ফান্ডামেন্টাল ভালো এমন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।