গোল্ডেন থ্রেড লিমিটেড

প্রাপ্যতা জালিয়াতি করে খালাস নেয়া হয় কাঁচামাল

রহমত রহমান: প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্সে যে কাঁচামাল অন্তর্ভুক্ত (প্রাপ্যতা) নেই, সেই কাঁচামালও বন্ড সুবিধায় খালাস নেয়া হয়েছে। মূলত কাগজ টেম্পারিং করে লাইসেন্সে ওই পণ্যের প্রাপ্যতা দেখানো হয়েছে। আর এই কাগজ টেম্পারিংয়ের সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। কাস্টমস যাচাই করার পর টেম্পারিং জালিয়াতি ধরা পড়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে টেম্পারিং করে খালাস নেয়া সেই পণ্যের রাজস্ব ফাঁকির বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সঙ্গে জালিয়াতি করায় প্রতিষ্ঠানের সব কাঁচামাল খালাস বন্ধ ও বিআইএন লক করা হয়েছে। গাজীপুরের গোল্ডেন থ্রেড লিমিটেড নামে শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের এই জালিয়াতি ধরা পড়েছে। আর কাঁচামাল খালাসের দায়িত্বে ছিলো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আবদুল কাইয়ুম লিমিটেড। কাস্টমস বলছে, কাগজ টেম্পারিং করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। তবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এনবিআর সূত্রমতে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার শতভাগ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন থ্রেড লিমিটেড। বর্তমানে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকার (উত্তর) আওতাধীন প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালে বন্ড লাইসেন্স পায়। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটি চীনা কাঁচামালের একটি চালান আমদানি করে, যা খালাসের জন্য ২৮ নভেম্বর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আবদুল কাইয়ুম লিমিটেডের মাধ্যমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। প্রতিষ্ঠান ৩৯ হাজার ১২১ ওয়াইডিএস শতভাগ ওভেন কটন ও পিউ কটন ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্সে বা বন্ড প্রাপ্যতায় ওভেন কটন ফেব্রিক্স নেই। কিন্তু প্রাপ্যতার কাগজ টেম্পারিং করে এইচএস কোড-৫২০৯.৩৯.০০ বসানো হয়, যার মাধ্যমে ওভেন কটন ফেব্রিক্স খালাস নেয়া হয়। আমদানি করা এই কাঁচামালের ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর ৪৬ লাখ ১৯ হাজার ৭২৬ টাকা।

সূত্র আরও জানায়, মূলত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রাপ্যতার কাগজ টেম্পারিং বা জালিয়াতি করে এই এইচএস কোড সংযোজন করে খালাসের জন্য কাগজপত্র জমা দেয়। কাস্টমস শুল্কায়ন শেষে পণ্য খালাস দিয়ে দেয়। পরে কাস্টমস যাচাই করলে জালিয়াতি ধরা পড়ে। প্রতিষ্ঠান ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিচারাদেশ শেষে কাস্টম হাউস গোল্ডেন থ্রেড লিমিটেডকে ৪৭ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়। প্রযোজ্য শুল্ককর ও অর্থদণ্ডসহ মোট ৯৩ লাখ ১৯ হাজার ৭২৬ টাকা পরিশোধে প্রতিষ্ঠান একবার তাগিদ এবং পরে চূড়ান্ত তাগিদপত্র দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান টাকা পরিশোধ করেনি। প্রযোজ্য শুল্ককর ও অর্থদণ্ড পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কাঁচামাল খালাস বন্ধ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিআইএন লক করা হয়েছে। ৩১ অক্টোবর কাস্টম হাউস এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রযোজ্য শুল্ককর ও অর্থদণ্ড পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল খালাস বন্ধ ও বিআইএন লক করা হয়েছে। রাজস্ব পরিশোধ না করা পর্যন্ত পরবর্তী ছাড়পত্র ছাড়া গোল্ডেন থ্রেড লিমিটেড ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বা একই মালিকের যেকোনো প্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর, কাস্টম হাউস বা শুল্ক স্টেশনে প্রতিষ্ঠানের সব কাঁচামাল খালাস বন্ধ ও সেবা সরবরাহ স্থগিত রাখতে সব কাস্টম হাউস ও ভ্যাট কমিশনারেটকে অনুরোধ করা হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের একজন উপকমিশনার শেয়ার বিজকে বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কাগজ টেম্পারিং করে কাঁচামাল বন্ড সুবিধায় (আইএম-৭) খালাস নিয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স নেই। আমরা যাচাই করার পর বিষয়টি ধরা পড়ে। আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের পণ্যের আমদানি বন্ধ ও বিআইএন লক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গোল্ডেন থ্রেড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমানের ব্যক্তিগত নম্বরে কয়েক দিন ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। অন্যদিকে চালানটি খালাসের দায়িত্বে ছিল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আবদুল কাইয়ুম লিমিটেড। গোল্ডেন থ্রেড লিমিটেডের বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কাগজ টেম্পারিং করে একটি পণ্য বন্ড সুবিধায় খালাস নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে সিঅ্যান্ডএফ মালিক মো. মনিরুজ্জামান মনির শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি কেন টেম্পারিং করব? আমার বেনিফিট কী! আমি কেন মাল নেব, আমার কি ফ্যাক্টরি আছে? আমি এখানে সার্ভিস রেন্ডার। কাঁচামাল খালাসের সময় বন্ড প্রতিষ্ঠান কি না, কাস্টমস দেখেনি? তাহলে আমাকে কেন দোষ দিলেনÑআমি টেম্পারিং করলাম, চুরি করলাম। প্রতিষ্ঠান কাগজ টেম্পারিং করেছে কি না, আমি জানি না। প্রতিষ্ঠান আমাকে যেভাবে ডকুমেন্ট দিয়েছে, আমি সেভাবে সাবমিট করেছি। ব্যাংকের ডকুমেন্টে পণ্য, এইচএস কোড সব লেখা রয়েছে।’ কাস্টমসের দোষ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাস্টমস সব সময় দোষ দেয়। আমি চুরি করছি, তুমি (কাস্টমস) কী করছ? আমি চুরি করতে চাইব। আপনি ধরবেন যে এটা এভাবে নয়, ওভাবে নয়। না তুমি এভাবে যেতে পারবা না। তাহলে তো ইমপোর্টার যেতে পারবে না।’