প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রয়াণ দিবস আজ

কবি, কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক, সম্পাদক প্রেমেন্দ্র মিত্রের প্রয়াণ দিবস আজ। জন্ম ১৯০৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাশিতে। পৈতৃক নিবাস দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বৈকুণ্ঠপুরে। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ভারতীয় রেলওয়াতে চাকরি করতেন। মাতার নাম সুহাসিনী দেবী।

প্রেমেন্দ্র মিত্র কলকাতার সাউথ সাবার্বন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২০) পাস করে সাহিত্য-সাধনায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন। ১৯২৩ সালে প্রবাসীতে ‘শুধু কেরাণী’ ও ‘গোপন চারিণী’ নামে দুটি গল্প প্রকাশিত হয় এবং গল্প দুটি নিয়ে কল্লোল পত্রিকা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করে। ফলে সাহিত্য অঙ্গনে তার খ্যাতি বেড়ে যায়। সাহিত্য-সাধনার প্রথমপর্বে তিনি ‘কৃত্তিবাস ভদ্র’ ছদ্মনামে লিখতেন।

প্রেমেন্দ্র মিত্র কল্লোল (১৯২৩) পত্রিকার একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। পরে মুরলীধর বসুর সহযোগিতায় কালিকলম (১৯২৬) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের উত্তরাধিকারকে নিজের লেখায় সাঙ্গীকরণের মাধ্যমে গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক মতবাদকে সমীহ করলেও সেসব তিনি নির্বিচারে গ্রহণ করেননি। সেসব মতবাদ তিনি গ্রহণ করেছেন স্বদেশের পরিপ্রেক্ষিতে, গরিব ও শ্রমজীবী সমাজের প্রতি সহমর্মিতার মাধ্যমে। তিনি একটি কবিতায় বলেন: ‘আমি কবি যত কামারের আর কাঁসারির আর ছুতোরের, মুটে মজুরের,/ আমি কবি যত ইতরের!’

কবিতা, উপন্যাস, গল্প ছাড়াও তিনি সৃজনশীল প্রবন্ধ, গান, চিত্রনাট্য, রম্যরচনা এবং গোয়েন্দা কাহিনিও লিখেছেন।

হাস্যকৌতুকের ধারায় তার অমর সৃষ্টি ‘পরাশর বর্ম’। বাংলা শিশুসাহিত্যে তার অতুলনীয় সৃষ্টি ‘ঘনাদা’। শিশুর মনোরাজ্যের রোমাঞ্চকর অনুভূতিগুলো তিনি ঘনাদা চরিত্রের মাধ্যমে অভিব্যক্ত করেন। ঘনাদা পড়ে প্রতিটি শিশু-কিশোর ঘনাদার ভেতর দিয়ে নিজেদের দেখতে উন্মুখ হয়ে ওঠে।

তার রচিত উল্লেখযোগ্য কাব্য: প্রথমা, সম্রাট, সাগর থেকে ফেরা, ফেরারি ফৌজ, হরিণ চিতা চিল, কখনও মেঘ, অথবা কিন্নর, নদীর নিকটে; গল্পগ্রন্থ: পঞ্চশর, বেনামী বন্দর, পুতুল ও প্রতিমা, মৃত্তিকা, অফুরন্ত, মহানগর, ধূলিধূসর, নিশীথ নগরী, কুড়িয়ে ছড়িয়ে, সামনে চড়াই, প্রেমেন্দ্র মিত্রের শ্রেষ্ঠগল্প, সপ্তপদী, জল পায়রা, নানা রঙে বোনা; উপন্যাস: পাঁক, কুয়াশা, মিছিল, উপনয়ন, আগামীকাল, প্রতিশোধ, প্রতিধ্বনি ফেরে, অন্য এক নাম, পা বাড়ালেই রাস্তা, পতাকা যারে দাও, স্তব্ধ প্রহর, মনুদ্বাদশ, অমলতাস, স্বপ্নতনু, দিগ্বলয়, যিনি বিধাতা, সেই যে শহর রাজোলি।

সাহিত্য-সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য প্রেমেন্দ্র মিত্র শরৎ স্মৃতি পুরস্কার, আকাদেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার, নেহেরু পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া শিশু সাহিত্য পরিষদের ভুবনেশ্বরী পদক, দেশিকোত্তম উপাধি, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের হরনাথ ঘোষ পদক প্রভৃতি সম্মাননা ও উপাধিতে ভূষিত হন। তিনি ৩ মে ১৯৮৮ কলকতায় মারা যান। [সংগৃহীত]