প্লাস্টিকপণ্যের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশগত বিপর্যয় এড়াতে সম্ভব

Stack of crushed colorful plastic bottles background waiting for recycle

এসএম নাজের হোসাইন : প্রতিবছরের মতো এবারও ১৫ মার্চ ‘বিশ্ব ক্রেতা-ভোক্তা অধিকার দিবস, ২০২১’ বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী উদ্যাপিত হচ্ছে। ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ক্রেতা-ভোক্তা আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণে প্রতি বছরের ১৫ মার্চ বিশ্বজুড়ে দিবসটি ‘বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ক্রেতা-ভোক্তা আন্দোলনে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ভোক্তা সংগঠনগুলো নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বে ভোক্তা আন্দোলনের মুল প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ও মাল্টিন্যাশনাল মনিটর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা রাল্ফ নাদের। সারা বিশ্বের ভোক্তা সংগঠনগুলোর ফেডারেশন কনজুমার ইন্টারন্যাশনাল (সিআই) ভোক্তা অধিকার প্রচারণার একমাত্র সম্মিলিত কণ্ঠস্বর বা দাবি আদায়ের বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক। সারা বিশ্বের ১১৫টি দেশের ২২০টিরও বেশি সংগঠন এর সদস্য। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও কনজুমারস ইন্টারন্যাশনাল-এর পূর্ণাঙ্গ সদস্য।

বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য: মুজিববর্ষের শপথ নিন, প্লাস্টিকদূষণ রোধ করি। ট্র্যাকিং প্লাস্টিক পল্যুশন প্রতিপাদ্য পুরো বিশ্বের জন্য হলেও দেশীয় সংস্করণে রূপান্তর করা হয়েছে। প্লাস্টিকদূষণের কারণে পরিবেশ ও জলবায়ুর কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে এবং তা ভোক্তাদের জীবন ও জীবিকায় কী ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতিসংঘ ভোক্তাদের জন্য কিছু সর্বজনীন অধিকার ও কর্তব্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘ-স্বীকৃত ভোক্তা-অধিকারগুলো হলোÑঅন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা পূরণের অধিকার, নিরাপদ পণ্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার, পণ্যের উপাদান, ব্যবহারবিধি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভৃতি তথ্য জানার অধিকার, নিরাপদ পণ্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার, পণ্যের উপাদান, ব্যবহারবিধি, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার, ন্যায্যমূল্যে সঠিক পণ্য ও সেবা পাওয়ার অধিকার, অভিযোগ করার ও প্রতিনিধিত্বের অধিকার, কোনো পণ্য বা সেবা ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বসবাস করার অধিকার। ঠিক একই সঙ্গে আমাদের রয়েছে পাঁচটি দায়িত্ব, এগুলো হলো পণ্য বা সেবার মান ও গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতন ও জিজ্ঞাসু হওয়া; দরদাম করে সঠিক পণ্যটি বাছাই করা; আপনার আচরণে অন্য ক্রেতা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে ব্যাপারে সচেতন থাকা; পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতন ও সক্রিয় হওয়া এবং ক্রেতা-ভোক্তা হিসেবে অধিকার সংরক্ষণে সোচ্চার ও সংগঠিত হওয়া। আর এ অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বসবাস করার অধিকার এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতন হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সে আলোকে এবারের প্রতিপাদ্য ভোক্তাদের জীবন ও জীবিকা এবং বেঁচে থাকার অধিকারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

‘প্লাস্টিক’ আমাদের কাছে অতি-পরিচিত একটি শব্দ। সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের জীবনে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ব্যাপক। সকালে উঠে যে ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করছেন এবং যে টিউব থেকে টুথপেস্ট আসছে, তার সবকিছুই প্লাস্টিকের তৈরি। এছাড়া দিনে প্রতিটি খাবার ও জীবনযাত্রায় প্লাাস্টিক পণ্য এখন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক যেহেতু পচনশীল নয়, তাই ব্যবহারের পর যেসব প্লাস্টিক পণ্য ফেলে দেয়া হয়, তার অধিকাংশই যুগের পর যুগ একইভাবে পরিবেশে টিকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক গবেষণায় বলেছে, মুদি দোকান থেকে কেনা পণ্য বহন করার জন্য যেসব ব্যাগ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো প্রকৃতিতে মিশে যেতে ২০ বছর সময় লাগে। চা, কফি, জুস কিংবা কোমল পানীয়ের জন্য যেসব প্লাস্টিকের কাপ ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। আর ডায়াপার ও প্লাস্টিকের বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত পচে না।

যখন প্লাস্টিক বর্জ্য কোনো স্থান দখল করে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে তখন প্লাস্টিকদূষণ সৃষ্টি হয়। অনেকেই প্লাস্টিকদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের কথা জেনেও প্রতিনিয়ত প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার করছি। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য নানাভাবে মিশে যাচ্ছে পরিবেশের সঙ্গে, যার ফলস্বরূপ উর্বর মাটি হচ্ছে অনুর্বর, জলাশয় জলজ প্রাণীর জন্য হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। প্লাস্টিকদূষণ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান একটি সমস্যা। বাংলাদেশ এক বছরে আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি করে। প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রায় তিন হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি হয়, যা বছরে মোট সৃষ্ট বর্জ্যরে আট শতাংশ। প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য প্রতিদিন সমুদ্রে মেশে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদীর মাধ্যমে (দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯)। ফলে এটা ধারণা করাই যায়, প্লাস্টিকদূষণ রোধ করা কতখানি জরুরি। সুবিধার অভাব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অপর্যাপ্ত বাজেট প্রভৃতি নানা সমস্যার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। 

প্লাস্টিকদূষণের পরিবেশগত বিপর্যয় উত্তরণের জন্য একটি টেকসই উপায় হচ্ছে ব্যবহার কমানো এবং পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়ন বাড়ানো। প্লাস্টিকের বোতল ও বিভিন্ন সামগ্রী এবং পলিথিন ব্যাগের অধিকাংশই পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়ন না করে প্রাকৃতিক পরিবেশে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে, যা পরে খাল, নদী ও সমুদ্রে জমা হচ্ছে। সেখান থেকে জলজ প্রাণী তা গ্রহণ করছে। এসব প্রাণীর মাধ্যমে তা খাদ্যচক্রে প্রবেশ করছে। জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে সরকার আইন করে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। আইনের প্রয়োগে শিথিলতার কারণে বর্তমানে সারা দেশে পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৯০ সালে ১৫ হাজার মেট্রিক টন প্লাস্টিক ব্যবহƒত হয়, যা ২০১০ সালে ছিল সাত লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ২০ বছরে ব্যবহার ৫০ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে ছোট, মাঝারি ও বড় পাঁচ হাজার শিল্পকারখানায় ১২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। প্লাস্টিক পণ্যের জনপ্রতি ব্যবহার বছরে ৭ দশমিক ৫ কেজি।

বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিয়ে গবেষণাটি করেছে বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের মধ্যে ওই গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ ও যুবকরাই পরিবেশে প্লাস্টিকদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। যেসব খাবারের সঙ্গে প্লাস্টিকের প্যাকেট রয়েছে, সেগুলোই সবচেয়ে বেশি ভোগ করছে তরুণ ও যুবকরা, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এই তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠী একবার ব্যবহার করা হয় এমন সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য বেশি ব্যবহার করে। 

পলিথিনের বিকল্প হিসেবে জনগণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কাগজের ব্যাগ, প্যাকেট ও ঠোঙা, কাপড়ের ব্যাগ, চটের ব্যাগ এবং পাটের বিভিন্ন সামগ্রী বাজারে চলে আসে। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে এসব বিকল্প পাইকারি দোকান গড়ে ওঠে। বিকল্প তৈরিতে গ্রামীণ নারীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পলিথিন শপিং ব্যাগের ব্যবহার ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এর ফলে ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতাসহ জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আইন প্রয়োগের শিথিলতায় বিকল্পের চাহিদা কমতে থাকে এবং ধীরে ধীরে তা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন বন্ধ হলে বিকল্পের চাহিদা সৃষ্টি হবে এবং তা বাজারে চলে আসবে। আইন প্রয়োগে শিথিলতা এবং জনসচেতনতা ধরে রাখার ব্যর্থতায় আগের অবস্থান ফিরে আসে। এমনকি আগের চেয়েও বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এ বছর নিয়ে গত দুই-তিন বছর একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকা মহানগরীতে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম প্রধান কারণ পলিথিন প্লাস্টিক। এগুলো পানি চলাচল ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখে।

২০০২ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন করে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়। সে আইনে বলা হয়Ñসরকার-নির্ধারিত পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি ও বাজারজাতকরণের প্রথম অপরাধের দায়ে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের ক্ষেত্রে অন্যূন্য দুই বছর, অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন দুই লাখ টাকা, অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা। আইনে বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের দায়ে অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রতিটি অপরাধের দায়ে অন্যূন্য দুই বছর, অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন্য দুই লাখ টাকা, অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড (জরিমানা) বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন অপরাধীরা। একই সালের ৪ মে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশের এসআই/সমপর্যায় থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ পর্যন্ত মহানগর-বহির্ভূত এলাকায় এসআই, সমপর্যায় থেকে সহকারী পুলিশ সুপার পর্যন্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘পরিদর্শক’-এর ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

এ আইন তৈরির ১৬ বছর পরও আইন মানা এবং আইনের বাস্তবায়নে কোনো সদিচ্ছা দেখা যায়নি। যেকোনো কাঁচাবাজারে গেলেই দেখা যাবে প্লাস্টিকের ব্যাগের দোকান। প্লাস্টিকের একবার ব্যবহারযোগ্য পণ্যের বাজার বাড়ছে প্রতিদিনই। প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক কাঁচামাল আমদানি করে বাংলাদেশ। আর প্রতি বছর এক হাজার ৭০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। ফলে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে প্রায় এক হাজার ২০০ কারখানায় নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরি হচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগই পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক। শুধু ঢাকা শহরে প্রতিদিন দুই কোটির বেশি পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়া হয়। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন ৩৫ লাখের বেশি টিস্যু ব্যাগ উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব ব্যাগ পলিথিনের হলেও কাপড়ের ব্যাগ হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।

পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিতে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণের ওপর জারিকৃত নিষেধাজ্ঞা পালনে দেশের জনগণকে সম্পৃক্ত করা দরকার। সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, সততা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং জবাবদিহির অভাব ও রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবে বর্তমানে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবহেলা। ভোক্তা হিসেবে আমাদের উচিত বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে যাওয়া, খাদ্য সরবরাহবারীকে নন-প্লাস্টিক প্যাকেজিং ব্যবহারে চাপ প্রয়োগ করা, পানির বোতল কেনা এড়িয়ে চলা, নিজের বোতল সঙ্গে রাখা ও প্লাস্টিক কাটলারি বর্জন করা। নিজেদের ও পরবর্তী প্রজšে§র সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের সংগ্রামকে আরও বেগবান করতে হবে, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

ভোক্তা অধিকার অবশ্যই মানবাধিকার। কারণ ভোক্তা অধিকারের সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা ও বেঁচে থাকার সম্পর্ক নিবিড়। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুনাফাখোর, মজুতদারি, সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নকল ভেজাল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্যের কারণে আজ নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার এখানে ভূলুণ্ঠিত। সরকার গুটিকয়েক অসৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে যাবতীয় রীতিনীতি প্রণয়ন করায় সাধারণ জনস্বার্থ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়ায়, কমায় এবং সরবরাহসহ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করে। আবার পরিবেশ ধ্বংস করে মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এখানে মুনাফাই মুখ্য। ভোক্তারা অসচেতন, অসংগঠিত, স্বার্থ সংরক্ষণে শক্তিশালী ভোক্তা সংগঠনের দুর্বলতা ও আইনে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার না থাকায় প্রবঞ্চনা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সেজন্য বাংলাদেশের ভোক্তাদের বলা হয়ে থাকে অসহায় ক্রেতা-ভোক্তা। বিভিন্ন দেশে ভোক্তারাই পণ্যের নিয়ামক। কারণ ভোক্তারা পণ্যটি ব্যবহার করলেই উৎপাদক ও বিক্রেতারা লাভবান হবেন। সে কারণে উন্নত দেশগুলোয় ভোক্তাদের সম্রাট উপাধি দেয়া হলেও আমাদের দেশে পরিস্থিতি তার উল্টো, বরং ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করেন ভোক্তারা কোন পণ্যটি হজম করবেন।