Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 1:15 pm

প্লাস্টিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম। যদিও বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণের জন্য খুব বেশি দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ঠিক রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পানি, মাটি ও বায়ুর মান ঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সেগুলো পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ অত্যাবশক। কিন্তু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। পরিবেশের সুরক্ষায় অতিসত্বর প্লাস্টিকের ব্যবস্থাপনা জোরদারে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে মনে করি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘দেশে ১৫ বছরে প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে তিনগুণ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিশ্বব্যাংকের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার গত দেড় দশকে মাথাপিছু অন্তত তিনগুণ বেড়েছে। এ বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ঢাকায়। দূষণরোধে টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। এর অংশ হিসেবে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো ও পুনর্ব্যবহার দেশের সবুজ প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল চাবিকাঠি হিসেবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।

আধুনিক বিশ্বের অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে প্লাস্টিক। কাজেই প্লাস্টিকের ব্যবহার ছাড়া দৈনন্দিন জীবন কল্পনা করা কঠিন। কাজেই প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। তবে এটির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হতে পারে না। কাজেই প্লাস্টিক বর্জ্যরে টেকসই ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

চলমান কভিডকালে প্লাস্টিকের নানামুখী ব্যবহার আরও বেড়ে গেছে বৈকি। মাস্ক, গ্লাভস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামাদিতে (পিপিই) প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে একটি বড় অংশ জলাশয় ও নদীতে ফেলা হয়, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এমন বাস্তবতায় প্লাস্টিক পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সরকার তাদের ঘোষিত এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে যতœবান হবে বলেই প্রত্যাশা। অন্যথায় দেশের সব ধরনের প্রকৃতিক জলাশয় মারাত্মক ক্ষতির শিকার হবে।

প্লাস্টিক যাতে বর্জ্যে পরিণত না হয়, সে জন্য একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য নিয়ন্ত্রণ জরুরি। বর্তমানে দেশে একবার ব্যবহার করে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা প্লাস্টিক পণ্যের পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় বেড়ে চলেছে। বর্তমানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক তৈজসপত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস, পানির বোতল ও বিভিন্ন কোমল পানীয়র বোতলসহ নানা ধরনের ‘সিঙ্গেল ইউস’ প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। এসব পণ্য উৎপাদনকারীদের এটি সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াকরণে বাধ্য করতে হবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন পড়ে তাহলে সেটিও করা উচিত বলে মনে করি। সর্বোপরি সরকার প্লাস্টিক বর্জের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস