দিন যত যাচ্ছে প্লাসিক ও পলিথিনের ব্যবহারও তত বাড়ছে। আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার এত বেশি পরিমাণে করছি, যার ফলে এসব অপচনশীল দ্রব্য আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্য বিনষ্ট করছে। শুধু তা-ই নয়, পাশাপাশি এগুলো আমাদের জীববৈচিত্র্য ও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। প্রতিনিয়ত পরিবেশকে নোংরা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই। প্লাস্টিক ও পলিথিন একজাতীয় দ্রব্য, যা পোড়ালে বায়ুদূষণ হয়, মাটিতে ফেলে দিলে মাটিদূষণ হয় এবং নদীতে বা সাগরে ফেলে দিলে পানিদূষণ হয়। এগুলো কখনও পচে না, অর্থাৎ অপচনশীল দ্রব্য। ফসলি জমি, নদ-নদী, খাল-বিলের মাটি, পানি ও পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সুতরাং প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার একদম বন্ধ করতে হবে। এ ভয়াবহতা বুঝতে হবে। তা আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও মানবদেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর বা ঝুঁকিপূর্ণ তার বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। নদী কিংবা সমুদ্রগুলোয় অনেক বেশি প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলার কারণে তা স্তূপাকারে জমা হচ্ছে। ফলে এসব অপচনশীল দ্রব্য সামুদ্রিক মাছেরা খায়। আমরা ওই মাছ খেলে নিশ্চয়ই ব্যাপক সমস্যা হবে। প্রতিবছরে প্রায় ৯ লাখ টন প্লাস্টিক আমাদের সাগর কিংবা মহাসাগরে জমা হচ্ছে। এভাবে যদি বাড়তেই থাকে, তাহলে ২০২৬ সালর দিকে তার সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ টন।
বাংলাদেশে একসময় মৃৎশিল্পের ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব শিল্প প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। দেশে কামার ও কুমারের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। মানুষ এখন মাটির তৈরি জিনিস শৌখিন পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনচর্চায় এটি নিয়ে আসতে হবে। আমরা যদি পাট, কাঠ, বাঁশ, বেত ইত্যাদির তৈরি পণ্য ব্যবহার করতে পারি, তাহলে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। এসব পণ্য আবার পরিবেশবান্ধবও। এসব পণ্য আমরা আমাদের অফিস-আদালত ও বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে সর্বত্র ব্যবহার করতে পারি। পানির বোতল, কাপ, প্লেট, চামচ ইত্যাদি অনেক পণ্যের বিকল্প কাগজের তৈরি পণ্য রয়েছে। তবে হরহামেশাই ছোট-খাটো সব কাজে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার করছি। পাটের তৈরি ব্যাগ পলিথিনের বিকল্প হতে পারে। অতীতে আমরা মাটির পাত্র, কাঁসার পাত্র, সিরামিক ও কাচের পাত্রের ব্যাপকহারে ব্যবহার করতাম। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তা বরং কমে গেছে। প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে হয়তো কিছু কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এই সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই অধিক। প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের যে ভয়াবহ ক্ষতি, সেটা কয়েক গুণ বেশি, যা আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ধাবিত করছে। এক্ষেত্রে আমরা যদি বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে মাটি, পাট ও গাছের বিভিন্ন বস্তু ব্যবহারের কথা চিন্তা করি, তাহলে নিশ্চয়ই আমরা আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি নিজেদেরও সুরক্ষিত করতে পারি। পাটজাত পণ্যের ব্যবহার পরিবেশবান্ধব। আমরা যদি প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার না তার পরিবর্তে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে পারি, তাহলে অবশ্যই পাটের গুণাগুণ বৃদ্ধি পাবে। পাটপণ্য পচনশীল দ্রব্য। একমাত্র পরিবেশের সৌন্দর্যের জন্য প্লাস্টিক ও পলিথিনের অধিক ব্যবহার বর্জন করা উচিত।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে আইনের মাধ্যমে পলিথিন নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ২০০৬ সালের পর থেকে আইনটির তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। আইনটি শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। পরিবেশের সৌন্দর্যবর্ধনে আমাদের ব্যক্তিপর্যায়ে সচেতন হতে হবে। প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার কীভাবে রোধ করা যায়, তার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন বাজার থেকে শুরু করে বাসাবাড়িতেও প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে। সুতরাং এ বিষয়ে সবাইকে অনেক অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি ২০০২ সালে প্রণীত আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব আমাদের পরিবেশ ও জীববৈিিচত্র্যকে টিকিয়ে রাখা। প্লাস্টিক ও পলিথিন আমাদের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর বটে, এটার মর্মার্থ অনুধাবন করা সব নাগরিকের কর্তব্য।
আকিব হোসাইন
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ