Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 12:26 pm

ফটিকছড়ির মাঠজুড়ে সবুজের ঢেউ, দুলছে কৃষকের স্বপ্নও

বাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম): মাঠজুড়ে শুধু সবুজ আর সবুজ ধানের চারা। যেদিকেই চোখ যায়, শুধু সবুজের সমাহার। ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নজর কাড়ছে আমন ধানক্ষেতে সবুজের সমারোহ। চারদিকে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। কৃষকের আগামীর সোনালি স্বপ্ন লুকিয়ে আছে সবুজ ধান ক্ষেতের মাঝে। শরতের রোদ-বৃষ্টির খেলায় সবুজের আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।

মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা, আর আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। সবুজঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। বাতাসে ঢেউয়ের মতো দোল খেয়ে খেলে যাচ্ছে ধান গাছের সবুজপাতা ও কাঁচা শীষ। কয়েক দিনের মধ্যেই শীষের দুধ-দানা গঠন শুরু হবে। আর এমন সবুজের সমারোহে রোপা আমন ধানের শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। ইতোমধ্যে ক্ষেত পরিচর্যা শেষ করে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় সার-কীটনাশক প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছে।

কৃষকদের মতে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির সংকট থাকলেও সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় সংকট কেটে ফসলের মাঠ অনেক ভালো হয়েছে। ধানের সবল-সতেজ চারা এবং শীষ বের হচ্ছে। তাই এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের কারণে আমন বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। ফলে মাঠে দোল খাওয়া নতুন ধানের নতুন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা।

ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভায় ২১ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত ২০২০-২১ সালে অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ হাজার ৩৫০ হেক্টর। চলতি আমনের মৌসুমে ব্রি ধান -৪৯ বেশি আবাদ করা হয়েছে। যা প্রায় ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমি। এবারও রোপা আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষকরা আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবারে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের অধিক ফলনের লক্ষ্যে নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত দু’বছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষক আমন ধান চাষে ঝুঁকেছে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেত প্রকৃতির খেয়ালে গাঢ় সবুজ রং ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ ভালো রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, সার ও বালাইনাশক ওষুধ প্রয়োগ ও পার্চিংসহ সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। মাঝে মধ্যে হচ্ছে বৃষ্টি, আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা। কয়েকদিনের মধ্যেই শীষে দুধ-দানা গঠন শুরু হবে। আর এমন সবুজ সমুদ্রের ঢেউয়ে দুলে উঠছে প্রকৃতি।

ধানের চারাগুলো থেকে কয়েকদিন পর বের হবে থোড়। এরপরেই ধানের সবুজ চারা এবং কাঁচা শীষ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। এরপর সোনালি ধানের শীষে ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। মাঠ ভরা ফসলের স্বপ্ন দেখে কৃষকদের চোখে মুখে ফুটে উঠবে আনন্দের ছোঁয়া। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষাণীর শূন্য গোলা। বোরো মৌসুমকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে এ অঞ্চলের চাষিরা।

উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের বেড়াজালী গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘এবার যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়া, শ্রমিক সংকট, সার ও কীটনাশকের ঊর্ধ্বগতি মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেরিতে আমন রোপণ করতে হয়েছে। তবে এখন আবহাওয়া বেশ ভালো। শেষ পর্যন্ত এরূপ আবহাওয়া থাকলে আমনের ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।’

ভূজপুরের ফকিরহাট এলাকার কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এবার আমনের ভালো ফলন হয়েছে। কয়েকদিন পর ধানের চারাগুলো থেকে থোড় বের হবে। বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজ আর সবুজ। এবার ভালো ফলন হলে ধান রোপণের খরচ কিছুটা উঠে আসবে বলে বিশ্বাস এ কৃষকের। এছাড়া কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে বিগত বছরের তুলনায় এবারও আমনের ভালো ফলন ঘরে তুলতে পারব।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ফটিকছড়ির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আমনের ভালো ফলনে সবুজের সমারোহে পরিণত হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সময়মতো পরামর্শ দেয়ায় আমনক্ষেতে এবার রোগবালাই কম। তাই এবারও ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি।’