ফতেহ লোহানী

অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক ও সাংবাদিক ফতেহ লোহানীর মৃত্যুদিবস আজ। তার পুরো নাম আবু নজীর মোহাম্মদ ফতেহ আলী খান লোহানী। তিনি সিরাজগঞ্জে জম্মগ্রহণ করেন। পিতা সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবু সাঈদ মোহাম্মদ সিদ্দিক হোসেন খাঁ (আবু লোহানী), মাতা স্কুল শিক্ষিকা ও লেখিকা ফাতেমা লোহানী। মায়ের তত্ত্বাবধানে কলকাতায় তার শিক্ষাজীবনের সূত্রপাত ঘটে। সেন্ট মেরিজ ক্যাথেড্রাল মিশন হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, রিপন কলেজ থেকে আইএ এবং বিএ পাস করার পর ১৯৫০-এ তিনি লন্ডন গমন করেন এবং ওল্ডভিক থিয়েটার স্কুলে নাট্য প্রযোজনা বিষয়ে দুবছরের কোর্স সমাপ্ত করেন। সেইসঙ্গে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সদস্য হিসেবে তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ে অধ্যয়ন করেন।

কলকাতার স্কুলে পড়ার সময় তিনি অভিনয়, কৌতুকাভিনয় ও আবৃত্তি করতেন। কলেজে অভিনীত তার প্রথম নাটক বনফুল রচিত শ্রী মধুসূদন-এ তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক উৎপল দত্ত পরিচালিত হ্যামলেট। পেশাদার নাট্যগোষ্ঠী ‘আলোক তীর্থ’-এর উদ্যোগে রঙমহল-এ মঞ্চস্থ হেমেন রায়ের নর-নারী নাটকে তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়ে প্রখ্যাত ক্যামেরাম্যান চলচ্চিত্রকার বিমল রায় তাকে হিন্দি চিত্র হামরাহী (১৯৪৫)-র একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন, সেই সঙ্গে তার নতুন নাম হয় কিরণ কুমার।

এর পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেন রঙিলা আর্ট করপোরেশন প্রযোজিত উদয়ন চৌধুরী (ইসমাইল মোহাম্মদ) রচিত ও পরিচালিত জোয়ার নাটকে এবং হিমাদ্রি চৌধুরী (ওবায়েদ-উল হক) রচিত, প্রযোজিত ও পরিচালিত দুঃখে যাদের জীবন গড়া (১৯৪৬) চলচ্চিত্রে। তখন তিনি কাজ করতেন দৈনিক আজাদ ও সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ-এ। বেতারের অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করতেন। ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টের পর ফতেহ লোহানী ঢাকা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন সংবাদ পাঠক হিসেবে, সেইসঙ্গে নাটক ও আবৃত্তিতেও অংশ নিতেন।

১৯৫৭ সালে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) প্রতিষ্ঠার পর তার পরিচালিত প্রথম দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ছিল আকাশ আর মাটি ও আসিয়া। ১৯৬৫ সালে মুক্তি পায় তার পরিচালিত উর্দু ছবি সাত রং। ১৯৬৭ সালে তিনি প্রথম অভিনয় করেন টেলিভিশন নাটক নির্ভীক-এ। ঢাকায় তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র রাজা এলো শহরে। ফতেহ লোহানী অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে মুক্তির বন্ধন, তানহা, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, জুলেখা, এতটুকু আশা, বাল্যবন্ধু, মোমের আলো, মায়ার সংসার, অন্তরঙ্গ, ঘূর্ণিঝড়, স্বরলিপি, দর্পচূর্ণ, দীপ নেভে নাই, ডাকু মনসুর, দুই রাজকুমার, এক মুঠো ভাত, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

চট্টগ্রামের কাপ্তাই-এ কুয়াশা ছবির শুটিংয়ে নিয়োজিত থাকাকালে ১৯৭৫ সালের ১২ এপ্রিল ফতেহ লোহানীর মৃত্যু হয়। [সংগৃহীত]