ফরিদপুরে পেঁয়াজের দাম কম লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা

মনিরুল ইসলাম টিটু, ফরিদপুর : পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা ফরিদপুরের চাষিরা। জেলার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ টাকায়। তবে চাষিরা বলছেন, অন্তত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দর না পেলে লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি তোলা কষ্টকর হয়ে যাবে।

সম্প্রতি সালথা উপজেলার ঠেনঠেনিয়া পেঁয়াজ বাজারে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৬টা থেকেই ভ্যান, নসিমন ও অটোরিকশাযোগে, কিংবা মাথায় বস্তা, ধামা বা ঝুড়িতে পেঁয়াজ নিয়ে হাটে আসছেন চাষিরা। হাটে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররাও দরদাম করে পেঁয়াজ কিনছেন। সপ্তাহে রোববার ও বুধবার বসা এই হাট চলে দুপুর পর্যন্ত।

হাটে মানভেদে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম উঠছিল দেড় হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত। জেলা শহর ও আশপাশের বাজারগুলোতেও একই চিত্র।

চাষিরা জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু সেই হারে দর বাড়েনি। এ মৌসুমে পেঁয়াজের আবাদও বেশি হয়েছে।

তা ছাড়া মৌসুমের শুরুতে বাজারে দর হাজার টাকার নিচে থাকায় ভালো দামের আশায় তারা ঘরে পেঁয়াজ মজুত করে রেখেছিলেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও সেই দর খুব বেশি বাড়েনি। এদিকে সেই পেঁয়াজ এখন পচতে শুরু করেছে, ফলে বিক্রি করে দিতেই হচ্ছে। এতে করে লোকসান আরও বাড়ছে।

কথা হয় বাজারের পেঁয়াজ চাষি নিজাম উদ্দিন শেখ, আলমগীর মোল্লা, ইব্রাহিম মাতুব্বর ও নিছার উদ্দিন খানের সঙ্গে। তারা বলেন, একটু ভালো দামের আশায় এতদিন ঘরে রেখেছিলাম, কিন্তু এখন যে দর আছে, তাতেও পুঁজি টেকানো কষ্ট। তাদের দাবি, অন্তত ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দর পেলেও লোকসানে পড়তে হতো না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহেদুজ্জামান জানান, ফরিদপুর জেলায় তিন প্রকারের পেঁয়াজের আবাদ হয়Ñশীতকালীন মুড়িকাটা পেঁয়াজ, হালি পেঁয়াজ ও দানা পেঁয়াজ। এই তিন ধরনের পেঁয়াজের মধ্যে হালি পেঁয়াজের আবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। এবার জেলার ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে এবং উৎপাদনও সন্তোষজনক বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। এদিকে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ধারণা, ঈদের পরপরই হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। এর ফলে দর কিছুটা কমে গেছে।

ঠেনঠেনিয়া বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী খোরশেদ মোল্লা বলেন, ‘এই হাট থেকে প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। একেক হাটে গড়ে এক কোটি টাকার বেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়।’
তবে চাষিদের আশা, দাম কিছুটা বাড়লে অন্তত খরচের টাকা তুলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। অন্যথায় আগামী মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে অনেকেই আগ্রহ হারাবেন।