ফল ও আদা-রসুন ছাড় করতে আমদানিকারকদের বন্দরের চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: নভেল করোনাভাইসের সৃষ্ট লকডাউনে সারা দেশের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম। এতে সরবরাহ কম দেখিয়ে অসৎ ব্যবসায়িরা বাড়াচ্ছে নিত্য পণ্যের দাম।

মাস ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে তিনগুণ। একই সাথে পেঁয়াজ রসুনেরও দাম বেড়েছে। এমন সময়ে বন্দরের জট কমাতে ও বাজারে পণ্য সরবরাহ বাড়াতে রোজার পণ্য খালাস করতে আমদানিকারকদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দর চত্বরে যাদের আমদানি করা পণ্য রয়েছে তাদেরকে রোববার (২৫ এপ্রিল) পৃথক চিঠি দিয়ে তা খালাসের জন্য বলা হয়েছে। আবার ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার এবং আমদানিকারকের পক্ষে পণ্য খালাসে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাছেও এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বন্দরের সচিব মো: ওমর ফারুক শেয়ার বিজকে জানান, রোজার পণ্যের সরবরাহ বাড়তে ও বন্দরে কনটেইনার জটও কমাতে যেসব প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা পণ্য পড়ে আছে, তাদের তালিকা করে তা খালাস নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আদা খালাস নিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে বন্দর। এদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের মেসার্স খাতুলগঞ্জ ট্রেডিং ও মেসার্স সাবরিন এন্টারপ্রাইজ এছাড়া ঢাকা সূত্রাপুরের মেসার্স তানজিল এন্টারপ্রাইজকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন জাহাজে আপনাদের অনুকূলে চট্টগ্রাম বন্দরে যে পরিমান এফসিএল কনটেইনার আসছে সেই পরিমান খালাস হচ্ছে না। ফলে বন্দরে এফসিএল কনটেইনারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইতোমধ্যে আদা পরিবাহিত ৪৭৫ টন বা আনুমানিক ৩৮ টিইইউএস কনটেইনার খালাসের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া বহি:নোঙ্গরে ও অন্যান্য বিদেশি বন্দরে আদার কনটেইনার অপেক্ষা করছে। এদিকে পাইকারি বাজারে চীন থেকে আমদানিকারা আদার দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা আদা ৯৮ টাকার বেশি খরচ পড়েনি। মূলত আদা আমদানি কমে যাওয়ায় বাজারে এই সংকট তৈরি হয়েছে।

আদার মতো বন্দরে এখন সাড়ে আট লাখ কেজি রসুন পড়ে আছে। এসব রসুন খালাস নেওয়ার জন্য ছয়টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহীদ নজরুল ইসলাম সড়কের মেসার্স ওয়াসিফ ট্রেডিং ও তুলাগের আরএস ট্রেড লিংক এবং চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের মেসার্স সুলতানা করপোরেশন, মেসাস সাবরিন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মনির এন্টারপ্রাইজ ও রেয়াজউদ্দিন বাজারের কে এন ইন্টারন্যাশানাল। তাদেরকে চিঠিতে বলা হয় রমজান মাস উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৮৫০ টন বা ৬৮ টিইইউএস রসুন পরিবাহিত কনটেইনার ডেলিভারির অপেক্ষায় আছে। এছাড়া বহি:নোঙ্গরে ও অন্যান্য বিদেশি বন্দরে আদার কনটেইনার অপেক্ষা করছে। এ রসুন দ্রæত খালাস না করলে বাজারে উক্ত পণ্যেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সরবরাহের ঘাটতির কারণে বাজারে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ও দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে রসুন দ্রুত খালাস করা প্রয়োজন। এ ছাড়া আমদানি করা ১৪ লাখ ৭৩ হাজার কেজি পেঁয়াজ খালাস নেওয়ার জন্য চারটি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়।

একই সাথে ফল পণ্যবাহী এফসিএল কনটেইনার খালাসের জন্য বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টাও এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রামের ফল ব্যবসায়ী সমিতি কারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদীসহ এফসিএল কনটেইনার ও কার্গো খালাসের জন্য সিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডষ্ট্রির সভাপতি ও চট্টগ্রাম সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সভাপাতি বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বন্দরে এখন ৪৩ হাজার ৭৪০ একক কনটেইনার পড়ে আছে, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি। গত এক মাস ধরে পণ্যবাহী কনটেইনার খালাসের হার ছিল কম। এর মধ্যে রোজার পণ্য রয়েছে। পণ্য খালাস কমে যাওয়ায় বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। বন্দরের হিসাব অনুযায়ী, রোববার বন্দরে এক হাজার ৪৭৩ টন পেঁয়াজ, ৪৭৫ টন আদা, ৮৫০ টন রসুন রয়েছে। এ ছাড়া ৫৭ হাজার ৫০০ টন তাজা ফল রয়েছে। এই চারটি পণ্যবাহী কনটেইনার রয়েছে আড়াই হাজার।