ফসলি জমি রক্ষা করে কৃষক বাঁচান

দেশে বেড়েই চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির বাজারমূল্য। দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে লাগামহীন দামে জনজীবনে নেমে এসেছে অস্বস্তির ছায়া। উৎপাদন ঘাটতি, শ্রমিকের অভাব, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ নানা সংকট দেখিয়ে চাল, ডাল, তেলের বাজার এখন আকাশচুম্বী। সবশেষ কিছুদিন আগে পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে প্রতিদিনকার রুটিনে থাকা খাবার থেকে শুরু করে পোশাক, যাতায়াত সব জায়গায় সরাসরি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর ফলে দিনের পর দিন জনদুর্ভোগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। এদিকে দেশে কোনো সংকট নেই বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন রূপ। তবে এর মধ্যে কিছু দ্রব্যের সংকট না থাকলেও কখনও কখনও অতিরিক্ত মুনাফালোভীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম সংকট, যা প্রকৃতপক্ষে দৈনন্দিন বাজারের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এর ওপর নতুন করে শুরু হয়েছে কৃষিজমিতে বালি ফেলা এবং ফসলি জমি থেকে বালি উত্তোলন, যা বর্তমানে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। পরিকল্পনাহীন এসব কাজে শুধু ফসলি জমির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে না; বরং দেশের খাদ্য উৎপাদনে বড় সংকট তৈরি করছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের জন্য বড় খাদ্য সংকট তৈরি করবে, তা কিছুটা অনুমান করা যাচ্ছে।

সম্প্রতি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদী ড্রেজিং করতে ‘মোংলা বন্দর ইনারবার ড্রেজিং’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের জন্য পশুর নদীর ড্রেজিংকৃত মাটি ফেলার জন্য ১০০০ একর জমি হুকুমদখলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে খুলনার দাকোপ উপজেলার বানীশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর তিন ফসলি, উর্বর কৃষিজমি, যা নিয়ে এসব স্থানীয় সাধারণ মানুষ এবং পরিবেশবাদীরা আন্দেলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি তৈরি করায় সারাদেশ থেকে নিন্দার ঝড় তুুলেছে সর্বস্তরের জনগণ। তবে এখানে কৃষিজমিতে বালি ফেলা হলেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু অতিরিক্ত লোভীদের কারণে কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। যা আমাদের কৃষি উৎপাদন এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বালিমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালি বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪ এর (খ) অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা হলে অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিন্ম এক কিলোমিটারের মধ্যে বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে এ নিয়মের তেমন কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যায় না।

দেখা যায়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রায়ই এসব অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। তবে এসব অভিযান স্থানীয় প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট থাকায় তা দীর্ঘস্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাই, বালি উত্তোলনকারীকে সাবধান কিংবা সামান্য টাকা জরিমানা করা হয়। বালি উত্তোলনের জন্য ব্যবহƒত ড্রেজার মেশিন যদি জব্দ করা হয় না। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চলে গেলে তারা আবার মরিয়া হয়ে উঠে বালি উত্তোলন করতে। তাছাড়া দাকোপের বানিশন্তায় মোংলা বন্দরের এমন পদক্ষেপ দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় তুলেছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশবাদী সংগঠনের আন্দোলন, সংগ্রাম করতে দেখা গেছে। এজন্য এ বিষয়ে তাদের আরও সচেতন হতে হবে। কারণে এভাবে চলতে থাকলে আমরা বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবো। এগুলোর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে অন্যদিকে ফসলি জমির অভাবে খাদ্যের বড় সংকট তৈরি হবে। আমরা দেখেছি পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশের বিভাগীয় শহর এবং জেলাতে পরিবেশ অধিদপ্তর রয়েছে। তবে তাদের কার্যক্রমে বিভিন্ন সময় বেশ উদাসীনতা লক্ষ করা যায়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এজন্য এসব ফসলি জমি রক্ষা করতে অবৈধ বালি উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা কিংবা জেলা প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি অসাধু বালি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এদেশের উর্বর ভূমিকে রক্ষা করতে, খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে এবং সর্বোপরি জীবন-জীবিকা রক্ষা করতে সাধারণ মানুষের সচেতনতার বিকল্প নেই।

রিয়াদ হোসেন

শিক্ষার্থী

সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা