আরিফুল ইসলাম :বর্তমানে ফার্মাসি বিষয় জনপ্রিয়তায় ও পছন্দের শীর্ষ পর্যায়ের একটি বিষয়। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ফার্মাসি বিভাগ খোলার মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বর্তমানে ৪৩টি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগ আছে। সাম্প্রতিক সময়ে সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে ফার্মাসি বিষয়ের প্রয়োগিক চাহিদা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ফার্মাসি একটি পেশাগত বিষয়। কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসি বিভাগে অনার্স শেষ করলে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ পেলেও বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের স্বীকৃতি সনদ পেতে হলে ফার্মাসি বিভাগকে ফার্মাসি কাউন্সিলের দেয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু কেন?
বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এটি ‘ফার্মাসি অধ্যাদেশ ১৯৭৬’-এর ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে ফার্মাসি শিক্ষা ও পেশা নিয়ন্ত্রণের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ১৯৭৬ সালে ফার্মাসি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ফার্মাসিকে পেশাগত বিষয় ও ফার্মাসিস্টদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট (গ্রেড এ), ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্ট (গ্রেড বি) এবং ফার্মাসি টেকনিশিয়ানদের (গ্রেড সি) পেশাজীবী হিসেবে নিবন্ধন সনদ দিয়ে থাকে।
এজন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগ খুলতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদন দিলেই পরিপূর্ণতা লাভ করে না। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের গাইডলাইন অনুসরণ না করলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফার্মাসি কাউন্সিল নিবন্ধন পাবে না। এর দায় সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের। কারণ একজন শিক্ষার্থী ফার্মাসি বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য ফার্মাসি কাউন্সিলের গাইডলাইন অনুযায়ী যোগ্য হলেই বিশ্ববিদ্যালয় সেই শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেয়।
ফার্মাসি বিভাগ চালু করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতি এবং ফার্মাসি কাউন্সিলের বেশ কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হয়। নির্দেশনার মধ্যে আছেÑপর্যাপ্ত শিক্ষক, ক্লাস রুম, পরীক্ষাগার, ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক উপাদান, গবেষণাগার, লাইব্রেরি এবং লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই প্রধান বিষয়। এছাড়া প্রাণিঘর, ঔষধি বাগান, সেমিনার রুমসহ আরও অনেক কিছু।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করেন ফার্মাসি কাউন্সিলের নিরীক্ষা কাউন্সিল। শিক্ষক সংকট, ল্যাবরেটরি স্থাপন না করা, পর্যাপ্ত কেমিক্যালের ব্যবস্থা না রাখা এবং সমৃদ্ধ পাঠাগার না থাকায় ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগে বি.ফার্ম কোর্সের অ্যাক্রেডিটেশন নবায়ন স্থগিত করা হয়।
বিশ্ববিদ্যায়গুলো হলোÑজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, সাদার্ন ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও স্টেট ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে চারটি।
এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রভাব ফেলতে পারে কর্মস্থলে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কিছু কথা: প্রথমত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও ফার্মাসি বিভাগ কেন চালু করা হলো? বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কোন ভিত্তিতে অনুমোদন দিয়েছে? এসব প্রশ্ন থেকেই যায়।
দ্বিতীয়ত, যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ফার্মাসি কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, তারা কি প্রথম থেকেই সব শর্ত পূরণ করেছিল? যদি শর্ত পূরণ করে তাহলে প্রথম অবস্থায় নিবন্ধন দেয়া ঠিক ছিল। কিন্তু যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম থেকে ফার্মাসি কাউন্সিলের গাইডলাইন অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাদের কেন ফার্মাসি কাউন্সিলের আওতায় আনা হয়েছিল?
ফার্মাসি কাউন্সিলের নেয়া এ ধরনের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত খুবই নিন্দনীয়। এর ফলে ফার্মাসি শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
যেসব বিশ্ববিদ্যালয়কে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থীরা এখন কর্মক্ষেত্রে আছে, তারা কাউন্সিল থেকে পেশাজীবী স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য না হলেও তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, যা আমাদের ওষুধশিল্প এবং ওষুধ রপ্তানিতে একটি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে এখন যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে রুটিন নিরীক্ষা পরিচালনা করা উচিত, কারণ এই নিরীক্ষার ফলে বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টদের সম্মান, মর্যাদা ও পেশাজীবী মনোভাব বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে দেশের ওষুধশিল্প আরও বেশি উন্নত হবে। পূর্ণ সক্ষমতা না থাকলে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসির মতো পেশাগত বিষয় খোলা উচিত নয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে অনুমোদন দেয়া ঠিক নয়। পাশাপাশি ফার্মাসি কাউন্সিলের নিরীক্ষা পরিচালনা করে সব বিষয় ঠিক থাকলেই সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে ফার্মাসি কাউন্সিলের আওতায় আনা উচিত।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচিত নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে ফার্মাসি বিভাগের অনুমোদন না দিয়ে এবং নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে কাউন্সিলের আওতায় না এনে, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগ আছে, সেগুলোর সক্ষমতা ও আন্তজার্তিক মানের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। এতে দেশের ফার্মাসি শিক্ষার মান উন্নত হবে, ফার্মাসিস্টরা আরও বেশি মূল্যয়ন পাবেন এবং ওষুধশিল্প আরও বেশি উন্নত হবে।
শিক্ষার্থী, ফার্মাসি বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়