দেশের গণপরিবহনগুলোর ফিটনেস নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মাঝেমধ্যে সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ, প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলে সাময়িকভাবে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু কিছুদিন পর ফের এগুলোর চলাচল শুরু হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণপরিবহনের ফিটনেস সার্টিফেকেট প্রতি বছরই নিতে হয়। গাড়ির আয়ু ১৫ বছর পার হলে ছয় মাস অন্তর এ সনদ নিতে হয়। আমাদের দেশে কেবল কোনো দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তখন বলা হয়, ফিটনেসবিহীন গাড়ি আর চলতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কিছু সময় পর সেগুলো ঠিকই চলে। পুরোনো গাড়ি রঙ করলেই হয়ে যায় নতুন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর ভূমিকা না থাকায় পুরোনো গাড়ি রঙ করেই রুটে নামিয়ে দেন প্রভাবশালী মালিক। আবার কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দেওয়া হয় সড়কে চলাচলের অনুমোদন (রুট পারমিট)।
গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘ফিটনেস সনদ ছাড়া সড়কে চলছে চার লাখ ৭৯ হাজার যান’ শীর্ষক প্রতিবেদনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দীনতাই নতুন করে সামনে এনেছে। খবরে বলা হয়, গত ২৪ জুন হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে বিআরটিএর প্রতিবেদন জমা দেন সংস্থাটির আইনজীবী। শুনানি শেষে আদালত আগামী দুই মাসের মধ্যে এসব গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যথায় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আদেশ দেওয়া হবে।
এর আগেও হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে বিআরটিএ বলেছে, ‘৩৩ শতাংশ বাসের ফিটনেস নেই। ৫৬ শতাংশ বাসের গতি নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেট নেই। (সূত্র: শেয়ার বিজ, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। এখন নতুন করে একই ধরনের খবর প্রমাণ করে সুষ্ঠু সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা এবং সড়ক নিরাপত্তা বিধান কল্পে গঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিআরটিএ যথাযথভাবে সক্রিয় নয়।’
সড়ক দুর্ঘটনার পরই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রমাণ হয়Ñদুর্ঘটনার জন্য ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিযোগিতাই দায়ী। অথচ বিআরটিএ ও পুলিশ প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে, পক্ষ বা মাসও পালন করে।
সড়কে দুর্ঘটনার শতভাগ রোধ সহজ নয়, সম্ভবও নয়। কিন্তু প্রতিদিন আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়েই চলেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির মালিককে বড় অঙ্কের জরিমানা, দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা খরচ আদায় করতে হবে সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিক থেকে। দায় নিতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অভিযানের পাশাপাশি বিআরটিএর কাজে গতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি থাকবে না।
