Print Date & Time : 27 August 2025 Wednesday 10:47 am

ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ হোক

জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিআরটিএ ভবনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেছেন, দেশে ৫ লাখেরও বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে। এ যানবাহনের ৩০ শতাংশই সড়কে চলাচল করে নাÑজানিয়ে  তিনি বলেছেন, যেগুলো চলে সেগুলোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি রাস্তা উন্নত হওয়ায় ফ্লাইওভার, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বছরখানেক ধরে বিআরটিএ রিয়েল ডেটা কালেকশন করছে বলেও জানান তিনি।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা জানিয়েছেন কিন্তু তার দেয়া তথ্যমতেই তিন লাখ ৫০ হাজার গাড়ি সড়কে চলাচল করে। আমরা লক্ষ করেছি, কোথাও কোনো দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলেই জানা যায়, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির ফিটনেস ছিল না, সড়কে চলাচলের অনুমতি ছিল না। আবার লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি সড়কে দাবড়ে বাড়ায়, যেগুলো দেখলে মনে হয় ফিটনেস নেই। হয়তো বিআরটিএর পক্ষ থেকে বলা হবে, ইঞ্জিন ভালো আছে!     

২২ অক্টোবর জাতীয় সড়ক নিরাপদ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ, ওভারব্রিজ, সব স্টেশন, ইন্টারসেকশন, চত্বর ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার দিয়ে সজ্জিত করা হবে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাস টার্মিনালে জনসচেতনতামূলক লিফলেট, স্টিকার বিতরণ ও ব্যানার টানানো হবে। শোভাযাত্রা ও নানা আয়োজনে হয়তো যাত্রীসাধারণ অনেক উপকৃত হবেন, সচেতন হবেন। কিন্তু ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে বিআরটিএকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। শুধু বিশেষ দিনে বা মাসে নয়, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, অভিযান সারাবছরই পরিচালনা করতে হবে। অভিযান চলাকালে ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়িগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয় রাজধানী কিংবা জেলা শহরের বাইরে; সেখানে প্রকাশ্যেই রং করিয়ে সেগুলো ‘সম্পূর্ণ নতুন’ করে ফেলা হয়। গণপরিবহন মালিকরা যেসব খরচ দেখিয়ে বিআরটিএর মাধ্যমে ভাড়া নির্ধারণ করেন, সেখানে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বড় অঙ্কের খরচ দেখানো হয়; প্রকৃতপক্ষে তারা গাড়ির কোনো সংস্কারই করেন না। বিআরটিএ নাকি রিয়েল ডেটা কালেকশন করছে; কিন্তু এসব বিষয়েও প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা দরকার।

শুধু ফিটনেসবিহীন যানবাহন নয়, লাখ লাখ যানবাহন চলছে প্রশিক্ষণবিহীন ভুয়া চালক দিয়ে। ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল যেমন বিপজ্জনক, তেমনই প্রশিক্ষণবিহীন ভুয়া চালক দিয়ে ভালো গাড়িও কম বিপজ্জনক নয়। ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সংঘটিত দুর্ঘটনা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) বলেছে, ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার পেছনে অতিরিক্ত গতি ও চালকের বেপরোয়া মনোভাব দায়ী। মহাসড়কে কম গতির ছোট যানবাহন চলাচলেও দুর্ঘটনা ঘটে। সরকার মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়,  ধীরগতির যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় কোনো আইনই যাথারীতি পরিপালিত হয় না। মূলত এ কারণেই সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। আবার মালিক-শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধও করে দেন নানা অজুহাতে। 

আইনের প্রয়োগে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা ও দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে রুট পারিমট, ফিটনেসবিহীন বন্ধ হবে। সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব এবং তাতে সড়কে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু হবে বলেই প্রত্যাশা।