Print Date & Time : 8 July 2025 Tuesday 2:59 am

ফিলিস্তিনের জন্য বায়তুল মোকাররমে দোয়া-মোনাজাত

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গাজাসহ ফিলিস্তিনের অন্যান্য স্থানে ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর সাম্প্রতিক বর্বরোচিত হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি নাগরিকদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা এ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন।

মোনাজাতে তিনি বলেন, হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের ওপর ইসরাইলি দখলদার বাহিনীর নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা করো। নিহতদের রুহকে মাফ করে দাও এবং তাদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দাও। আহতদের দ্রুত সুস্থ করে দাও। ফিলিস্তিনিদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও বেশি ভূমিকা পালন করার তৌফিক দাও।

এছাড়া প্রার্থনায় সবার সুস্থতা কামনা, পরিবার-পরিবার হেফাজত, ঈমানি ও বরকতময় জীবন, দেশ ও জাতির জন্য রহমত দান, কবরবাসীর জন্য ক্ষমা, পৃথিবীর মুসলমানদের জন্য রহমত, মহামারি থেকে মুক্তি ও উম্মতে মুহাম্মাদিদের জন্য খাস রহমত প্রার্থনা করা হয়।

দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন বায়তুল মোকাররমের মুসল্লিরা, ইসলামি দল-সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানিয়ে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানান।

এদিকে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ও ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন পুরান ঢাকার সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের বর্বর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, বোমা হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কবি নজরুল কলেজের সামনে থেকে রায় সাহেব বাজার পর্যন্ত যায়। পরে রায় সাহেব বাজার মোড় থেকে বাহাদুর শাহ পার্কে এসে শেষ হয়। এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে কয়েক হাজার সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

এ সময় সমাবেশে ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘বদরের হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘বিশ্বের মুসলিম, এক হও এক হও’, ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ইসরাইলের ইহুদিরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ইসরাইলের কাপুরুষেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কবি নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। মিছিল শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ ও ইমাম উলামা পরিষদের নেতারা ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানান এবং সারা বিশ্বের মুসলমানদের তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।

সবাবেশে বক্তারা ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে সেনা পাঠিয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

বিক্ষোভ সমাবেশে পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. আবু হানিফ বলেন, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রকে সন্ত্রাস ও দখলদারত্বের পথ ছেড়ে দিয়ে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে হবে। অবিলম্বে ইসরাইলের বর্বর গণহত্যা বন্ধ করা হোক। নয়তো সারা বিশ্বের মুসলমান একসঙ্গে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

বাংলাদেশকে পুনরায় পাসপোর্ট সংশোধন করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইসরাইলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করতে হবে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসতিয়াক আহমেদ হƒদয় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের ইহুদি সেনারা অবৈধভাবে ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণের ওপর চেপে বসেছে এবং নির্যাতন করছে। তারা নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতির নাজুক অবস্থা তৈরি করেছে। নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের আগ্রাসন থেকে কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। ইসরাইলি বর্বরতার শিকার ফিলিস্তিনের লাখ লাখ মানুষ। এমনকি তাদের নির্যাতন থেকে বাদ যায়নি নারী-শিশুরাও।

কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান রিপন জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে, ফিলিস্তিন বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে এবং বন্ধুরাষ্ট্রের পরিচয় দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ সরকার শক্তভাবে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ছিল এবং আছে। আমরা একই সঙ্গে শিক্ষার্থী ও বাঙালি হিসেবে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানো নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে মনে করি। সেই সঙ্গে ইসরাইলি আগ্রাসনের নিন্দা জানাই।

বিক্ষোভ মিছিলে তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ‘সেভ গাজা’ ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘উই স্ট্যান্ড উইথ প্যালেস্টাইন’, ‘প্যালেস্টাইন হলোকাস্ট’, ‘জেরুজালেম বিলংস টু প্যালেস্টাইন’ ‘ইসরাইল হটাও, ফিলিস্তিন বাঁচাও’ লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়।