পৃথিবীর মানচিত্রে অনেক রাষ্ট্র রয়েছে, অনেক জাতি রয়েছে। তবে এমন জাতি খুব কমই আছে, যারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুগের পর যুগ ধরে রক্ত দিয়ে মূল্য দিচ্ছেÑ নির্যাতনের প্রতিবিম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যাদের জীবন। ফিলিস্তিন একটি এমন নাম, যা আজ নিপীড়নের প্রতীক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি।
ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও নির্মম হামলায় ফিলিস্তিন আজ রক্তাক্ত। গাজা উপত্যকায় প্রতিনিয়ত নির্বিচারে বোমা বর্ষণ, শিশুদের কান্না, মায়ের বুক খালি হয়ে যাওয়া, হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যাওয়া, এমনকি খাদ্য ও পানির মতো মৌলিক চাহিদাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। অথচ পৃথিবীর তথাকথিত মানবাধিকার কর্মীরা আজ নির্বাক! জাতিসংঘ কিংবা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো শুধু উদ্বেগ প্রকাশের নাটক করে যাচ্ছে। মানবতার এ লজ্জাজনক পরাজয়ে প্রশ্ন ওঠেÑ বিশ্ব বিবেক কি আজ মৃত?
আমরা দেখেছি, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই পশ্চিমা দেশগুলো একজোট হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। অথচ ফিলিস্তিনে গণহত্যা চললেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বরং তাদের সামরিক সহায়তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। এতেই বোঝা যায়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি আজ ন্যায় ও অন্যায়ের বিচার নয়, বরং স্বার্থ ও পক্ষপাতের ভিত্তিতে পরিচালিত।
এই দ্বিমুখী নীতি শুধু রাজনীতিবিদদের নয়, প্রভাবশালী মিডিয়াগুলোরও। ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধকে ‘সন্ত্রাস’ হিসেবে চিত্রিত করে, আর ইসরায়েলের বর্বরতাকে ‘আত্মরক্ষা’। এমন ভ্রান্ত প্রচারণা বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করছে। অথচ শিশু হত্যাকে আত্মরক্ষা বলা চলে না, হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেয়াকে যুদ্ধনীতি বলা চলে না, অবরুদ্ধ করে মানুষকে বাঁচতে না দেয়া কোনো সভ্যতার কাজ হতে পারে না।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার, বিশ্ব বিবেক আজ কার্যত একটি নিষ্ক্রিয় শব্দ। যেখানে গুলি চালায় শক্তিধর রাষ্ট্র, সেখানে ন্যায়বিচার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ফিলিস্তিন শুধু একটি ভৌগোলিক লড়াই নয়; এটি ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও মানবতার অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। যারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে নীরব, তারা অবচেতনেই অন্যায়ের অংশীদার।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর কণ্ঠে প্রতিবাদের ধ্বনি থাকলেও, কার্যকর কূটনৈতিক চাপ গড়ে তোলা প্রয়োজন। মুসলিম বিশ্বকেও একত্রিত হয়ে নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেবল ভাষণে নয়, বরং বাণিজ্য, কূটনীতি ও জনমত গঠনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বর্বরতার প্রতিবাদ করতে হবে।
আমরা বিশ্বাস করি, পৃথিবীর ইতিহাস কখনও অন্যায়ের পাশে থাকে না। হয়তো সময় লাগবে, হয়তো আরও অনেক রক্ত ঝরবে, কিন্তু একদিন ফিলিস্তিন বিজয়ী হবে। তখন ইতিহাস নীরবদের মুখোশ খুলে দেবে। সেই দিনটির অপেক্ষায়, এখন দরকার প্রতিটি সংবেদনশীল বিবেকবান মানুষের সোচ্চার হওয়াÑ কলমে, কণ্ঠে ও কর্মে। বিশ্ব বিবেকের নীরবতা ভাঙুকÑ ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।
রেদোয়ানুল হাসান রায়হান, শিক্ষার্থী, আল-কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়