ফুলবাড়িয়ায় বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ আতঙ্কে পোলট্রি ব্যবসায়ীরা

এম. ইদ্রিছ আলী, ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পোলট্রি ফার্মে বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত মুরগির সন্ধান মিলেছে। প্রশাসনের নির্দেশনায় উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের সানি পোলট্রি ফার্মে বার্ড ফ্লু রোগে আক্রান্ত বেশ কিছু মুরগি নিধন করে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। এরপরই ফুলবাড়িয়াসহ আশেপাশের মুক্তাগাছা, গৌরীপুর, ত্রিশাল, টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ময়মনসিংহ সদর উপজেলার পোলট্রি ব্যবসায়ীদের মাঝে বার্ড ফ্লু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকেই দ্রুত মুরগি বিক্রি করে দিয়ে খামারে নতুন করে বাচ্চা উঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই জেলার বিভিন্ন উপজেলার পোলট্রি ফার্মগুলোতে মুরগি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে ফুলবাড়িয়া উপজেলাতে এ মড়ক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উপজেলার পোলট্রি শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত এনায়েতপুর ও ভবানীপুর ইউনিয়নে গত দেড় মাসে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ খামারির লক্ষাধিক লেয়ার মুরগি মারা যায় বলে জানা গেছে।

খামারিরা এসব মৃত মুরগি বস্তায় ভরে রাতের আঁধারে খালি জায়গায়, খালে, বিলে ও নদীতে ফেলে রাখছে। এছাড়া মড়ক দেখা দিয়েছে পাশের মধুপুর ও মুক্তাগাছা উপজেলার কিছু কিছু ফার্মেও। পরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফুলবাড়িয়ার একটি ফার্মে বার্ড ফ্লু ধরা পড়ে। তবে অন্য কোথাও বার্ড ফ্লু আক্রান্ত মুরগির সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে।

ফুলবাড়িয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডেইরি ও পোলট্রি কনসালটেন্ট ডা. মো. আব্দুর রশিদ হাওলাদারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল উপজেলার সানি পোলট্রি ফার্মসহ পাঁচটি ফার্মের মৃত মুরগি নিয়ে পরীক্ষা করেন। সেখানে সানি পোলট্রি ফার্মের মুরগিতে বার্ড ফু¬ রোগের সন্ধান পান তারা।

পরে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আফতাব হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লীরা তরফদার ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে সোয়াইতপুর গ্রামের বার্ড ফু¬ আক্রান্ত সানি পোলট্রি ফার্মের ৪৪০টি মুরগি নিধন করে মাটিতে পুঁতে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়।

সেই সঙ্গে সংক্রমিত খামার থেকে চতুর্দিকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো পাখি, ডিম, পাখির মাংস ও পাখিজাত পণ্য ওই এলাকার বাইরে স্থানান্তর ও প্রবেশ করা নিষেধ করে দেওয়া হয়। সংক্রমিত এলাকার হাঁস-মুরগি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এলাকা হিসেবে নির্ধারণ করতে গত ৩০ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক। তবে এ ব্যাপারে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে জেলার একটি এলাকার ফার্মে বার্ড ফ্লু ধরা পড়ায় সর্বত্র খামারিদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মুক্তাগাছার পোলট্রি খামারি মজিবুর রহমান জানান, তার ফার্মে দু’চারটি মুরগি মারা গেলেও সেটাকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন। তবে ফুলবাড়িয়ায় বার্ড ফ্লু শনাক্ত হওয়ায় কিছুটা শঙ্কার মধ্যে আছেন বলেও জানান।

ফুলবাড়িয়ার খামারি শামসুল হক জানান, তার ফার্মে বেশ কিছু মুরগি মারা গেছে। তবে বার্ড ফ্লু দেখা দেয়নি। কিন্তু তিনি ভয়ে এখন আপাতত মুরগির বাচ্চা উঠাচ্ছেন না বলে জানান।