ফু-ওয়াং ফুডসের অসংগতি, তদন্তে নেমেছে বিএসইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডস। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফু-ওয়াং ফুডসের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধানে নেমেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ফু-ওয়াং ফুডসের আর্থিক অসঙ্গতি ও অনিয়ম অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ফু-ওয়াং ফুডসের
আর্থিক অনিয়ম খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৭ মে জারি করা এক আদেশে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান, উপপরিচালক মো. শাহনেওয়াজ ও ডিএসইর ডেপুটি ম্যানেজার বদরুল ইসলামকে।

তদন্তে ২০২৪ সালের আর্থিক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন ছাড়াও ব্যবসায়িক কার্যক্রম, সম্পদ ও দায়, বিনিয়োগকারীদের মূলধন, নগদপ্রবাহ এবং আর্থিক বিবরণীর আইএএস, আইএফআরএস ও আইএসএ’র সঙ্গে সামঞ্জস্য যাচাই করা হবে। পাশাপাশি কোম্পানিটির প্লান্ট ও মেশিনারি, ভূমি, ভবন প্রভৃতির মালিকানা ও প্রকৃত অস্তিত্বও পর্যালোচনা করা হবে।

জানা গেছে, টানা দুই আর্থিক বছরে (২০২৩ ও ’২৪) বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ফু-ওয়াং ফুডস। সর্বশেষ ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে মাত্র শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। আর ২০২৫ সালের মার্চ শেষে কোম্পানিটির ৯ মাসের শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৩ পয়সা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।
এ ছাড়া কোম্পানিটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিয়া মামুনের বিরুদ্ধে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে।

এর আগে ২০১৭ সালে এমারাল্ড অয়েল অধিগ্রহণের পর ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ফু-ওয়াং ফুডসের ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় মিনোরি বাংলাদেশ। তবে এই মালিকানা পরিবর্তনের পরও কোম্পানিটি আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়। উল্টো বিএসইসির নিয়ম অনুসারে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও।

ফু-ওয়াং ফুডস ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে ‘বি’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন হচ্ছে। এর পরিশোধিত মূলধন ১১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং মোট শেয়ারসংখ্যা ১১ কোটি ৮ লাখ ৩৯ হাজার ২৮৪টি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে কোম্পানিটির মাত্র ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার। বিপরীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৮২ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই তদন্তের ফলে ফু-ওয়াং ফুডসের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা এবং অনিয়মের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিএসইসির এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তদন্তের ফলাফল এবং পরবর্তী সময় বিএসইসির পদক্ষেপের ওপর এই কোম্পানির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।