Print Date & Time : 16 August 2025 Saturday 1:01 pm

ফেরি-লঞ্চের ভাড়ায় যেন নৈরাজ্য না হয়

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। সাধারণত জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহন ও নৌ-পরিবহনের মালিকপক্ষ ভাড়া বাড়ানোর জন্য মুখিয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করে না। নিজেরাই ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভাড়া বাড়ানো বা কমানোর ক্ষেত্রে সরকার নিয়ম বেধে দিতে শুরু করেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের সেই নিয়মও উপেক্ষা করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটে দেশে। আর ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালনা না করার কারণে বাড়তি ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলতেই থাকে।

সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার লঞ্চ ও ফেরির ভাড়া বাড়িয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। এ বিষয়ে গত বুধবার দৈনিক শেয়ার বিজে ‘লঞ্চভাড়া ৩০ ও ফেরিভাড়া বেড়েছে ২০ শতাংশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, জ্বালানি তেলের দাম পুনর্নির্ধারণের পরিপ্রেক্ষিতে নৌযানে যাত্রীভাড়া ৩০ শতাংশ সমন্বয় করা হয়েছে। এতে প্রথম ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়িয়ে তিন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়িয়ে দুই টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এছাড়া দেশের সব রুটের ফেরিতে যানবাহন পারাপারের ভাড়া ২০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তা অত্যন্ত স্পষ্ট। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তি খাতের লঞ্চমালিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। বর্ণিত ভাড়া বৃদ্ধির বিবরণ অনুযায়ী, আগে কোনো নির্দিষ্ট দূরত্বের ভাড়া ১০০ টাকা হলে এখন সেটি ১৩০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু এ ভাড়া ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে ভাড়া সমন্বয় করা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এ ভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের দাবি-দাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে বলে নানা সময়ে অভিযোগ উসকে দেখা যায়। আবার তাদের দাবি মতো সরকার ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তারা সে প্রজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত মেনে চলেন না। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বাড়তি ভাড়া আদায় হরহামেশাই চোখে পড়ে। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয় বলে মনে করি। সরকার নির্ধারিত ভাড়া সঠিকভাবে অনুসৃত হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য ভাড়া বাড়ানোর পর অন্তত দুই সপ্তাহ কঠোরভাবে বিষয়টি নজরদারি করা উচিত বলে মনে করি। এরপর নতুন ভাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর তদারতি কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। জন ভোগান্তি লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় আমলে নিবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।