Print Date & Time : 26 July 2025 Saturday 6:57 pm

ফেসবুক: প্রশংসা কুড়ানোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিন্দুস্তান টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফেসবুক ব্যবহারকারী শীর্ষ তিন দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান প্রথম। ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিলিপাইন এবং তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার অধিকাংশ ব্যবহারকারীই তরুণ।’
মানুষ ফেসবুকে নিজের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করছে ঠিকই, কিন্তু এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্যের কাছ থেকে প্রশংসা প্রত্যাশা করছে। আগে স্কুলপড়ুয়া প্রজন্ম কোথাও বেড়াতে গেলে বাড়িতে ফিরে দাদা-দাদি, নানা-নানি ও মা-বাবার সঙ্গে তা শেয়ার করত। ছোট্ট ভাইটা নতুন পাঞ্জাবি পড়ে দৌড়ে যেত তাকে পাঞ্জাবিতে কেমন মানিয়েছে জানতে। এখন তার আর এসবের তেমন প্রয়োজন পড়ে না। কারণ ডিজিটাল যুগে জীবনকাহিনি বলে প্রশংসা কুড়ানোরও যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আছে। ফেসবুক নামক প্ল্যাটফর্মে এখন একটা ছবি ছাড়লেই যে শত শত কমেন্ট, রিয়েক্ট মিলছে, সেটাই তো আসল প্রাপ্তি। মা-বাবা, দাদা-দাদি ও ভাই-বোনের সঙ্গে কথার ফুলঝুরিতে কি আর ‘ওয়াও! বিউটিফুল! হ্যান্ডসাম! লাভলি! মেইড ফর ইচ আদার!’-এর মতো হূদয়কে আবেগাপ্লুতকারী অমরবাণী মিলবে! তাই মানুষ এখন সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সময়কে অপচয় করছে প্রশংসা কুড়ানোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে। এখন ছেলে-মেয়েদের কাছে মা-বাবা ও বাস্তব জীবনের বন্ধুবান্ধবের চেয়ে বেশি গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুবান্ধব, যে কারণে পারিবারিক বন্ধনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে মা-বাবা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। ফলে এক অসুস্থ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে।

নতুন প্রজন্ম ফেসবুকে সুন্দর ছবিসহ প্রোফাইল তৈরি করাকেই আধুনিকতার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই তো তারা ঝুঁকছে ঋতুকেন্দ্রিক ফটোশুটের দিকে। তারা পরিবারকে না জানিয়ে কাশবন, নদীতে নৌকা ভ্রমণ এবং বিভিন্ন অনিরাপদ জায়গায়ও ঘুরাঘুরি করতে যায়, যা বর্তমান প্রজন্মকে ধীরে ধীরে পড়াশোনা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
যে মেয়েটা বাস্তব জীবনে কোনো ছেলের ‘বিউটিফুল! জোস! ওয়াসাম! হট!’ বলাকে ইভটিজিং হিসেবে আখ্যায়িত করছে, সেই মেয়েই ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে সেগুলোকে ফলোয়ারদের স্রেফ প্রশংসা বলে দাবি করছে। এটি কি ডিজিটাল ইভটিজিং নয়!
মানুষ সত্য-মিথ্যা, উচিত-অনুচিত, প্রকাশযোগ্য-অপ্রকাশযোগ্য বিষয়ের বোধ হারিয়ে ফেলছে। সামান্য লাইক ও কমেন্ট পাওয়ার জন্য মানুষ ব্যক্তিগত জীবনের কাহিনিও ফেসবুকে শেয়ার করছে, যে কারণে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা ঘটনাক্রমে বিবাহবিচ্ছেদের দিকে মোড় নিচ্ছে।

ফেসবুকের ক্ষতিকর প্রভাব বর্তমান তরুণ প্রজন্মের ওপর সবচেয়ে বেশি। যেখানে পড়ালেখা কোনো শিক্ষার্থীর প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত, সেখানে তরুণরা এখন জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ ছেড়ে সময় দিচ্ছে ফেসবুকে। কোনো ছেলে বা মেয়ে যখন দেখছে ফেসবুকে ছবি ও ভিডিও দেয়ার ফলে তার ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়ছে এবং আয়ের একটা সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তখন সে সত্য-মিথ্যা ও ভালো-মন্দের পরোয়া না করে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে নানা বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করছে। ডিজিটাল যুগের এ ডিজিটাল মহামারি থেকে বাঁচতে হলে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।
প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতা সৃষ্টি না করলে বর্তমান প্রজন্মকে ধ্বংসের কবল থেকে বাচানোই কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।