Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 3:44 am

ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা

সম্প্রতি চিত্রাভিনেতা রিয়াজের শ্বশুর আবু মহসিন খান ফেসবুক লাইভে এসে নিজ নামে লাইসেন্স করা অস্ত্রের ট্রিগার মাথায় চেপে আত্মহত্যা করেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে তিনি রেখে গেলেন বেশ কিছু প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ‘মানুষ আসলে একটা জীবনে কী এমন চায় কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ, ব্যাংক-ব্যালেন্স, ধনসম্পদ, নাকি ভোগবিলাস?’ এসব কিছুই নয়; মানুষের জীবনে শুধু প্রয়োজন ভালোবাসা, নিঃসঙ্গতার সঙ্গী এবং একটা ভরসার হাত।

মানুষটা তার ঘরে প্রবেশের দরজাটাও কিন্তু বন্ধ করেননি; বরং কেউ এলে তাকে না জানিয়েও যাতে ঢুকতে পারে, সেই নোটিসও দরজায় টানিয়ে দিয়েছেন‘মামা, দরজা খোলা, হাতল চেপে ঢুকতে পারেন।’ কিছু হলেই কি পুলিশকে খবর দিতে হবে? একজন মরে যাচ্ছে, সেটা আটকানোও কি পুলিশের কাজ? মানুষ হিসেবে আমার কি কোনো দায় নেই? প্রশ্নগুলো আমাদের বর্তমান অবস্থা আর সমাজ পরিস্থিতির প্রমাণ দিচ্ছে।

একটা মানুষ আত্মহত্যার পর আমরা সংবেদনশীল হই, সমবেদনা জানাই ওই মৃত ব্যক্তির প্রতি।  জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-এর বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের আগেকার এক উম্মতের কোনো এক ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হন। আঘাতের যন্ত্রণায় তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েন এবং একটি ছুরি দিয়ে হাত কেটে দেন। ফলে রক্ত ক্ষয় হয়ে লোকটি মারা যান। তার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দাহ নিজের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়ো করেছেন। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ হাদিসে কুদসি (সহিহ বুখারি)।

কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা: আয়াত ২৯)। অথচ কালেমা পড়ে আত্মহত্যা করার সময় আবু মহসিন খান আল্লাহর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। তার সামনে এই হাদিস বা আয়াতটা কেউ তুলে ধরেননি।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালে ১০১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। একজন আত্মহত্যাকারীর প্রতি না চাইতেই সমবেদনা ও দুঃখ চলে আসে আমাদেরÑসেটা স্বাভাবিক; কিন্তু তাই বলে এমনটা স্বাভাবিক হওয়া উচিত নয় যে সমবেদনা প্রকাশ একজন আত্মহত্যাকারীর মৃত্যুকে সঠিক বলার পর্যায়ে চলে যায়। বরং এমন মৃত্যুর সমবেদনাকে মনে চেপে প্রচণ্ড ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যানের সুরে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পাপকে নিকৃষ্ট বলে প্রচার করা উচিত, যেন আশেপাশের আর দশজন দেখে শিক্ষা নেন, যেন আত্মহত্যা করার কথা মনে এলেই ভয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করেন।

আমি কিংবা আপনি ততক্ষণ মুমিন বলে দাবি করতে পারি না, যতক্ষণ না আল্লাহর মনোনীত রাসূল (স.)-এর আদর্শকে জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করতে পারি। তাই আসুন একজন আত্মহত্যাকারীর জীবন বিনাশকে সমবেদনার চোখে নয়, বরং ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে আর দশজনের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করি এবং আল্লাহর দান মূল্যবান নেয়ামত হায়াতকে নিজের জন্য সবকিছুর ঊর্ধ্বে ভালোবাসতে শিখি।

নেজাম উদ্দিন

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়