প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরকাচিয়া গ্রামের বেপারি বাড়ির জান্নাতুল ফেরদাউস উর্মির (১৪) বিয়ে আগামীকাল রোববার। বখাটেদের অত্যাচারে অপরিণত বয়সেই তার বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন প্রবাসী বাবা। কেননা বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক করেও বখাটেদের অত্যাচার বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
উর্মির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বিয়ের গেট সাজানো হয়েছে। বাড়িতে স্বজনসহ মেহমানও আসতে শুরু করেছে। পুরো বাড়িতেই আনন্দ বিরাজ করছে। কিন্তু উর্মির মন খারাপ। সে আর কখনও স্কুলে যেতে পারবে না, বান্ধবীদের সঙ্গেও খেলতে পারবে না।
চরকাচিয়া গ্রামের বেপারি বাড়ির প্রবাসী মাজেদ মালের বড় মেয়ে উর্মি। সে এলকেএইচ উপকূল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাড়িতে বিয়ের গেট সাজানো হচ্ছে। ভেতরে প্যান্ডেলও সাজানো হচ্ছে। তার স্বজনরা জানান, বখাটেদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উর্মিকে বিয়ে দিতে হচ্ছে। আগামীকাল একই গ্রামের সর্দার বাড়ির মফিজুল হক সর্দারের ছেলে মোল্লার হাট বাজারের ব্যবসায়ী আবদুল করিমের (৩৫) সঙ্গে উর্মির বিয়ে।
এদিকে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যালয়ে পরীক্ষা শুরু হবে। কয়েকদিন স্কুলে না গেলেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল উর্মি। কিন্তু বিয়ের কারণে স্কুলেও আর যাওয়া হবে না, পরীক্ষাও আর দেওয়া হবে না। তাই উর্মি ঘরের ভেতরে কাঁদছে। উর্মির এ কান্নার শব্দ শুনে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও স্বজনদের বাধার কারণে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিদ্যালয়ে গেলে উর্মির কয়েকজন সহপাঠী জানায়, উর্মি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। ওর মা-বাবা তাকে বিয়ে দিচ্ছে। আমরা সহপাঠী হয়েও কোনো কিছুই করতে পারছি না। উর্মির বাবা মাজেদ মাল জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে ভোলার কালীগঞ্জ থেকে এ গ্রামে জমি কিনে বসবাস করছেন। প্রায় এক বছর হয়েছে তিনি প্রবাসে থাকেন। গত মাসে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে এসেছেন। তিন মেয়ের মধ্যে উর্মি সবার বড়। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার সময় এলাকার বখাটেরা উর্মিকে উত্ত্যক্ত করত। তার স্ত্রীকে তিন মেয়েকে নিয়ে আতঙ্কে রাতযাপন করতে হয়। কোথাও বিচার পাননি। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বাল্যবিয়ের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ মিন্টু ফরাজী তার স্বাক্ষর দিয়ে উর্মির জš§ সনদ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কাশেম জানান, মেয়েটি সুন্দরী হওয়ায় এলাকার বখাটেরা উত্ত্যক্ত করত। একাধিকবার ইউপি কার্যালয় ও স্থানীয় ফাঁড়ি থানায় সালিশ বৈঠক হলেও কোনো লাভ হয়নি।
দক্ষিণ চরবংশী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মোহাম্মদ মিন্টু ফরাজী জানান, তার এলাকায় কোনো বাল্যবিয়ে হতে দেওয়া হবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিন চৌধুরী জানান, ঘটনাটি তিনি অবগত হয়েছেন। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।