বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস আজ। ১৮৩৮ সালের ২৭ জুন পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁঠালপাড়া গ্রামে  তার  জš§। পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ব্রিটিশ উপনিবেশিক সরকারের একজন কর্মকর্তা, পরে হুগলির ডেপুটি কালেক্টর। ১৮৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের যে দুজন ছাত্র বিএ পাস করেন, বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন তাদের একজন। তিনি তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিম্ন নির্বাহী চাকরিতে (সাব-অর্ডিনেট এক্সিকিউটিভ সার্ভিস) যোগ দেন এবং পরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে চাকরি করেন। তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ কর্তৃপক্ষ তাকে ১৮৯১ সালে ‘রায়বাহাদুর’ উপাধি প্রদান করে।

বঙ্কিমচন্দ্রের লেখক হিসেবে মফস্বলে চাকরিরত থাকাকালে বঙ্কিমচন্দ্র বাংলার প্রকৃত অবস্থা প্রত্যক্ষ করেন এবং বাংলার জনগণের বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করেন। জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংসর্গ এবং তাদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া থেকে তিনি তার উপন্যাসের চরিত্র গ্রহণ করেন।

চব্বিশ পরগনা জেলার বারুইপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থাকা অবস্থায় বঙ্কিমচন্দ্র তার প্রথম দুটি বিখ্যাত  উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী ও কপালকুণ্ডলা রচনা করেন। ১৮৮৭ সালের মধ্যে তার অন্যান্য গদ্য রচনাসহ মোট ১৪টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। ১৮৮০ থেকে বঙ্কিমমনীষা রাজনীতি ও ধর্মের দিকে অগ্রসর হয়। কারণ সেসময় তিনি একজন পুনরুত্থানবাদী সংস্কারক হওয়ার চেষ্টা করেন। আনন্দমঠ (১৮৮২) সম্ভবত বঙ্কিমচন্দ্রের শেষ স্মরণীয় সাহিত্যকীর্তি। বাংলা উপন্যাস ও বাংলা গদ্য সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলা সাময়িকী সাহিত্যের প্রসারেও বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান অসামান্য। তার বিভিন্ন উপন্যাসে মুসলমানের বিরুদ্ধে হিন্দুর বিজয় দেখানো হয়েছে, যেমন: রাজসিংহ (১৮৮২) এবং সীতারাম (১৮৮৮)। কোনো কোনোটিতে আবার ব্রিটিশশক্তির বিরুদ্ধেও হিন্দুজাতির বিজয় দেখানো হয়েছে, যেমন: দেবী চৌধুরাণী এবং আনন্দমঠ।

ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের মধ্যপন্থি রাজনৈতিক নেতারা প্রথমদিকে বঙ্কিমচন্দ্রের এই হিন্দু জাতীয়তাবাদী সেøাগানে খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু স্বদেশী যুগের যুবসমাজের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা এবং তার মতাদর্শে যুবসমাজের মধ্যে যে উদ্যম সৃষ্টি হয়েছিল, তা কংগ্রেসকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে এবং একটি জাতীয়তাবাদী দলে পরিণত হতে প্রভাবিত করে। এরপর কংগ্রেস তার জাতীয় রাজনীতির সেøাগান হিসেবে ‘বন্দে মাতরম্’কে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে এবং সমগ্র ভারতবর্ষে তা ব্যবহƒত হতে থাকে। অতীতে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার এবং পরবর্তী জীবনে সাহিত্যব্যক্তিত্ব হিসেবে নিষ্ক্রিয়তা সত্ত্বেও বঙ্কিমচন্দ্র রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের আবির্ভাব পর্যন্ত সবার কাছে, এমনকি শিক্ষিত মুসলিম সমাজের কাছেও সে সময়ের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে পরিগণিত হতেন। ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  [সংগৃহীত]