নিজস্ব প্রতিবেদক: গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘গণতন্ত্র মানে এক দিনের ভোট নয়, সুশাসন। বঙ্গবন্ধুকে যদি আমরা শ্রদ্ধা করি তাহলে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) মিলনায়তনে গতকাল ‘সুশাসনে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পিপলস্ পার্টির (বিপিপি) সভাপতি বাবুল সরদার চাখারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক ধর্মমন্ত্রী নাজিম আল আজাদ। বক্তব্য দেন ভাষাসৈনিক মনজুরুল হক সিকদার, বিপিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান লিটন, মো. আব্দুল কাদের, নাজমা আক্তার প্রমুখ।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের প্রাণের মানুষ। প্রাণের মানুষও মাঝে মাঝে ভুল করেন। তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল হলো তিনি গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। কিন্তু ভারত ও সিপিবির প্ররোচনায় তাঁর হঠাৎ শখ হলো আজীবন রাষ্ট্রপতি থাকার। তিনি তাঁর মৃত্যুর আগের দিন আমাকে সাভার থেকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বাকশালে যোগদানের জন্য। আমি বলেছি, ‘মুজিব ভাই, আপনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। এ কাজ করবেন না।’ আমি সত্য বলতে কখনও ভয় পাই না। সেই যুগেও পাইনি, এখনও পাই না। জেল-পুলিশের অত্যাচার এসব সহ্য করেই বড় হয়েছি। মুজিব ভাইকে সত্য বলা আমার নৈতিক দায়িত্ব ছিল। আমি পরদিন বিলেতে চলে গিয়েছিলাম। এয়ারপোর্টে নামার পর আমাকে ডেকে বলা হয়েছিল, ‘মি. চৌধুরী, আপনার রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করা হয়েছে। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?’ এ কথায় আমার চোখে পানি এসেছিল।
তিনি বলেন, যারা শেখ হাসিনাকে রোল মডেল বানাচ্ছে, কওমি জননী বানাচ্ছে সবাই পালিয়ে গিয়েছিল। অথচ আমি কখনও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ করিনি। তাদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। সিরাজুল আলম খান আমার বন্ধু মানুষ। সেদিন আমার চোখে অজান্তেই জল চলে এসেছিল। আমি অনেক কষ্ট করে বলেছিলাম, তিনি তাঁর রক্ত দিয়ে জাতির ঋণ পরিশোধ করে গেছেন। তাই তাঁকে (বঙ্গবন্ধুকে) যদি আমরা শ্রদ্ধা করি আজকে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্র মানে এক দিনের ভোট নয়, সুশাসন।
তিনি বলেন, কাল জজ সাহেব ৫৪ ছাত্রের জামিন দেননি। এই জজ সাহেবের বিচার করতে হবে রাস্তার মাঝখানে এনে। তারা চান, তাদের ল্যাংটা করে লোকজন তাদের গায়ে থুতু দিক। আমাদের সৌভাগ্য সাত দিনের মধ্যে আমরা রোজিনা ইসলামের মুক্তি পেয়েছি। সাত দিনও লাগা উচিত ছিল না, এক দিনে জামিন পাওয়া উচিত ছিল। ভালো লেগেছে যে, আওয়ামী সাংবাদিক, বিএনপি সাংবাদিক ভাগ না হয়ে সবাই একসঙ্গে রাস্তায় নেমেছে। আমরাও তাই তাদের পাশে ছিলাম। সরকার ভয় পেয়েছে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। শুধু নির্বাচন নয়, চাই একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র একটি ছোট সংস্থা। আমরা রিকশাওয়ালাদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। মাত্র ২০০ টাকা দিয়ে তার পুরো পরিবার সব চিকিৎসা পাবে। সঙ্গে তাদের জন্য একটি কল্যাণ সমিতি করতে চাচ্ছি। রিকশা যে চালায়, সে রিকশার মালিক হবে। এতে করে তার আর্থিক উন্নয়ন হবে। তার সন্তানটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘২০ শতাংশের মতো নারীর উপস্থিতি পিপলস পার্টির জন্য একটি ভালো খবর। আরও ভালো খবর সভাপতি তার মেয়েকে এনেছেন, স্ত্রীকে এনেছেন। আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে আমাদের বোন, মা, স্ত্রীকে এসব মিটিংয়ে নিয়ে আসা। আজকে নারীরা রাস্তায় বেরিয়ে না এলে গণতন্ত্র আসবে না। মেয়েদের সমান চোখে না দেখলে গণতন্ত্র আসবে না।’
তিনি আরও বলেন, আজকের সভার আর একটি ভালো দিক হলো কোরআন তেলাওয়াত করেছেন ইসহাক। সেখানে বলা হয়েছে, জালেমের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলায় নামাজ পড়াতেন। আজ সেই এলাকার কাউন্সিলরকে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আরও ভালো লাগছে ভাষাসৈনিক আজাদকে দেখে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের তুলনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মশার সঙ্গেও তো আমাদের রক্তের সম্পর্ক আছে। ভারত ’৭১ সালে আমাদের সাহায্য করেছে। তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু কৃতজ্ঞতার একটা হিসাব আছে। ভারত প্রথম বছর আমাদের যে সাহায্য করেছে, তার মূল্য উঠিয়ে নিয়েছে। যে ৩০ লাখ শহীদের কথা আমরা বলি, তারা কোথায় মারা গেছেন? ভারতের মাটিতে, রিফিউজি ক্যাম্পে। তখনকার দিনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এত ভালো ছিল না। ভারত আমাদের জন্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু ব্যবস্থাপনা ভালো না থাকায় অনেক বেশি লোক মারা গেছে। আজ ভারত আমাদের বন্ধু। বন্ধুর নমুনা সেখানে আমার যে মা-বোন-পিতা মারা গেছে, তাদের নাম পাই না, তালিকা পাই না। তা পেলে আমি আমার গ্রামের রাস্তায়, শহরের রাস্তায় টাঙিয়ে দিতে পারতাম। আমার দেশবাসী জানত তারা আমাদের জন্য আত্মত্যাগ করেছে। কিন্তু ভারত প্রতিপদে প্রতিবন্ধকা সৃষ্টি করছে।’