শেয়ার বিজ ডেস্ক: আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতি বছর এক লাখ মেট্রিক টন আম রপ্তানির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ প্রণয়নের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে গতকাল সোমবার হর্টেক্স ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘আম রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য আমের উন্নত ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক জাতীয় কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দেশে বছরে ২৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়। অথচ রপ্তানি হয় মাত্র কয়েকশ’ টন আম। বছরে এক লাখ টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন, রোডম্যাপ প্রণয়ন ও আমের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
তিনি বলেন, আমের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। রপ্তানির বাধা চিহ্নিত করে তা নিরসনে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে নিরাপদ আমের নিশ্চয়তা দিতে তিনটি ভ্যাকুয়াম হিট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। উৎপাদন থেকে জাহাজীকরণ পর্যন্ত আম নিরাপদ রাখতে উত্তম কৃষি চর্চা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট দেয়ার কাজ চলছে। এর ফলে চলতি বছর গত বছরের তুলনায় আম রপ্তানি পাঁচগুণ বেড়েছে। আগামীতে রপ্তানির পরিমাণ অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
কর্মশালায় জানানো হয়, দেশে প্রতি বছর আমের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ অনেক কম। ডিইএর হিসাবে ২০১৯-২০ সালে দেশে প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়েছে। বিপরীতে আম রপ্তানি হয়েছে ২৮৩ মেট্রিক টন। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের ফলে চলতি বছর ২০২০-২১ সালে ১৬২৩ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় পাঁচগুণেরও বেশি।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়, দেশে উৎপাদিত আমের বিরাট অংশ গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ সংগ্রহোত্তর পর্যায়ে নষ্ট হয়। খিরসাপাত আমের ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ ও ফজলি আমের ২৯ শতাংশ নষ্ট/অপচয় হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ বছরে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আম রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য নতুন বাজার অনুসন্ধান, রপ্তানি চাহিদা অনুযায়ী উন্নতজাত নির্বাচন, ফাইটোস্যানিটারি পদ্ধতি ও আমদানিকারক দেশের উত্তম কৃষি চর্চা মেনে আম উৎপাদন, সার্টিফিকেশন, উন্নত প্যাকিং, উন্নত সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থা, রপ্তানি কার্যক্রমে দক্ষতা, সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ, বিমান বন্দরে সুষ্ঠু কার্গো ব্যবস্থাপনার ওপর কর্মশালায় গুরুত্বারোপ করা হয়।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির ছিলেন বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মো. বখতিয়ার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ এবং এনএটিপি-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মতিয়ার রহমান। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থাপ্রধান, আমচাষি, ব্যবসায়ী, শাকসবজি ও ফল রপ্তানিকারক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।