নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাস সংকটে একদিকে গ্যাসভিত্তিক বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে বিল বকেয়া পড়ায় বড় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ বা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আদানিসহ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট। আর মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোটাই বন্ধ। এতে সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ফলে দেশব্যাপী হঠাৎ করে দুদিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে।
গতকাল শেয়ার বিজের অফিসে অনেকেই কল করে জানান, গ্রামাঞ্চলে দিনরাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার থেকে ছয় ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। কোথাও সারা দিনে আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। এতে জনগণের ভোগান্তির সীমা নেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, কয়লাভিত্তিক বড় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে ভারতের ঝাড়খণ্ডের আদানি পাওয়ার থেকে। ওই কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে বকেয়া বিল বাড়তে থাকায় তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। ৩০ অক্টোবর আদানি এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও গতকাল তা অর্ধেকে নামিয়ে আনে। ৩১ অক্টোবর কেন্দ্রটি থেকে গড়ে সারাদিন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।এর আগে বিল পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল আদানি।
সম্প্রতি পিডিবিকে পাঠানো চিঠিতে আদানি পাওয়ার (ঝাড়খণ্ড) লিমিটেডের প্রতিনিধি এম.আর. কৃষ্ণ রাও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৭০.০৩ মিলিয়ন ডলারের জন্য প্রয়োজনীয় এলসি দেয়নি এবং ৮৪৬ মিলিয়ন ডলারের (১০ হাজার ৮৬ কোটি টাকা) বকেয়াও মেটায়নি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সময়মতো এলসি না দেয়া এবং বকেয়া বিল পরিশোধ না করার ফলে পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টের আওতায় ‘মেটেরিয়াল ডিফল্ট’ ঘটেছে, যা আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে বাধা দিচ্ছে। বকেয়া পরিশোধ ও এলসির অভাবে আদানি কয়লা সরবরাহকারী এবং অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদারদের বিল দিতে পারছে না। এতে আদানির ঋণদাতারাও সহায়তা প্রত্যাহার করছে।
আদানি তাদের চিঠিতে পিডিবিকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সমস্যাগুলো সমাধানের আহ্বান জানায়। তা না হলে ৩১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেবে বলেও উল্লেখ করে। যদিও গতকাল কোম্পানিটি বিদ্যুৎ পুরোপুরি বন্ধ না করে সরবরাহ ৬৬ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে।
এদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো রামপাল। এ কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট। তবে কয়লা সংকটে এর একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। অন্য ইউনিট থেকে গতকাল পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ৬২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আর তৃতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার। চট্টগ্রামের এ কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। কয়লা সংকটে এ কেন্দ্রটিরও একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এতে গড়ে ৬১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ১৫০ মেগাওয়াট। তবে কয়লা সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। একইভাবে দেশের গ্যাসভিত্তিক বৃহৎ দুটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিট মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি গ্যাস সংকটে বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ।
একইভাবে গ্যাসভিত্তিক সামিট মেঘনাঘাট-২ ৫৮৩ মেগাওয়াট কেন্দ্রটিও বন্ধ রয়েছে। তবে গ্যাস সংকটে শুধু এ দুটি নয়, মোট ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ রয়েছে। আর জ্বালানি তেল সংকটে ২৭টি ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলচালিত কেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ঘাটতি তৈরি হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে প্রচুর লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গতকাল রাত ১টায় লোডশেডিং হয় এক হাজার ৫৮৪ মেগাওয়াট, ২টায় এক হাজার ২৫৭ মেগাওয়াট ও ৩টায় এক হাজার ২২০ মেগাওয়াট। পরে তা কিছুটা কমলেও সারাদিনই লোডশেডিং ছিল। গ্যাস ও কয়লা সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন খুব একটা বাড়েনি। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল সাড়ে ১০ হাজার থেকে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াটের ঘরেই।