বন্ডে বিনিয়োগ: ১৭ বছরে সর্বোচ্চ সুদহার

ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে অধিক সুদের লাভের আশায় ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িয়েছে। বিশেষত, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার এখন ১৫.৮০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। নিরাপদ বিনিয়োগের খাত হিসেবে বন্ডে বিনিয়োগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেওয়া কমিয়ে দিলে বিল ও বন্ডের মাধ্যমে সরকারের ঋণ নেওয়া বৃদ্ধি পায়। এদিকে, সুদের হার বাড়ানোর কারণে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে, কারণ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ অধিক নিরাপদ, তবে ঋণ বিতরণে মন্দ ঋণের শঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২০ জুন ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদহার ১৫.৮০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এতে সরকার ৬,২৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, তবে পুরো ঋণ একই সুদহারে নিতে পারেনি। ১২.৫৪ শতাংশ থেকে ১৫.৮০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ প্রদান করতে হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে এই বন্ডের সুদহার ছিল ১০.৪৬ শতাংশ।

এছাড়া, ১৫ বছর মেয়াদি বন্ডে সুদ বেড়ে ১৫.২০ শতাংশ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ ১৫.৮০ শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ডে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে, কারণ সুদের হার ক্রমাগত বাড়ছে এবং বন্ডের মতো নিরাপদ বিনিয়োগ বাজারে আর নেই। ঋণ বিতরণের পর খেলাপি হওয়ার আশঙ্কা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।

২০০৭ সালের পর থেকে বন্ডের সুদহার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায় এবং এর পর থেকে কমতে থাকে। তবে, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে এবং সুদের হার বাড়ানোর মাধ্যমে একটি নতুন অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বন্ডে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিভিন্ন মেয়াদের ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার নিম্নরূপ:

২ বছর মেয়াদি: ১২% থেকে ১৪.৯০%

৫ বছর মেয়াদি: ১২.৩০% থেকে ১৫.৩০%

১০ বছর মেয়াদি: ১২.৫৪% থেকে ১৫.৮০%

১৫ বছর মেয়াদি: ১২.৬০% থেকে ১৫.২০%

২০ বছর মেয়াদি: ১২.৫৯% থেকে ১৫.৫০%

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘদিন থেকে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে না, এবং ব্যাংকগুলো সরকারি বিল-বন্ড ক্রয়ের ক্ষেত্রে চাহিদা অনুযায়ী সুদের হার বাড়িয়ে নিচ্ছে। এর ফলে সরকারের সুদ ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে, বেসরকারি খাতের ছোট উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না, কারণ ব্যাংকগুলো অধিক সুদের নিরাপদ খাতে বিনিয়োগ করছে।” তিনি আরও বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে দেশের ছোট উদ্যোক্তারা উৎসাহ হারাবেন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ বন্ধ হবে।”

বর্তমানে শহরাঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে টাকা না রেখে বন্ডে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। তবে, এ ধরনের বিনিয়োগের ফলে ব্যাংক আমানতের পরিমাণে প্রভাব পড়তে পারে।

উল্লেখযোগ্য যে, দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত বছর থেকে সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত পূর্ণ হয়নি এবং মূল্যস্ফীতি বাড়তেই রয়েছে।

ব্যাংকাররা জানান, ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে তারল্যসংকট বিরাজ করছে এবং কিছু ইসলামী ব্যাংক এক বছরের বেশি সময় ধরে তারল্যসংকটে ভুগছে, যা সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে প্রভাব ফেলছে। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বর্তমানে আরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।